আর দুর্নীতির কারণে দেশেরব্যাংকিং খাতের নানা প্রতিষ্ঠানে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। তবে বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারাই বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত।
গত এক বছরে দেশের আর্থিক সেক্টরের প্রায় শতাধিক দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে দুদক। এসব অনুসন্ধানের পর কমিশন প্রায় শতাধিক মামলা করেছে। যে পরিমাণ অর্থের দুর্নীতি করা হয়েছে তা প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার মত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্নীতি বন্ধে দুদককে আরও শক্তিশালী হতে হবে। কেননা দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে সবার আগে এই খাতের কোথায় কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে সেটা আগে দুদককে বের করতে হবে। তবেই দুদকের পক্ষে ব্যাংকিং খাতের দু্নীতি বন্ধ করা সম্ভব হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিগত এক বছরের গ্রেফতার কার্যক্রমের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ব্যাংকিং সেক্টরে দুর্নীতির অভিযোগে করা বিভিন্ন মামলায় ২০১৬ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে মোট ৮০ জনের বেশি ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে দুদক। এদের মধ্যে আছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ১৬ কর্মকর্তা, অগ্রণী ব্যাংকের ১৪ কর্মকর্তা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৬ কর্মকর্তা, রূপালী ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তা, জনতা ব্যাংকের ৪ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ২ কর্মকর্তা, বেসিক ব্যাংকের ২ কর্মকর্তা ও আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ১ জন কর্মকর্তা।
অন্যদিকে দুর্নীতির দায়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারাও দুদকের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। এদের মধ্যেআছেন বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৪ কর্মকর্তা, সিটি ব্যাংকের ৪ কর্মকর্তা, পূবালী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা, ইসলামী ব্যাংকের ২ কর্মকর্তা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ২ কর্মকর্তা,ব্যাংক এশিয়ার ২ কর্মকর্তা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২ কর্মকর্তা।
এছাড়া শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এনআরবি (গ্লোবাল) ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ১জন করে কর্মকর্তাকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করেছে দুদক।
ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ে টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলানিউজকেবলেন, দুদক যেভাবে কাজ করছে সেটা প্রশংসনীয়। কিন্তু দুদককে আরও কর্মঠভাবে, দক্ষভাবে, সুচারুভাবে কাজগুলো করতে হবে। ব্যাংকিং সেক্টরে যে দুর্নীতি হচ্ছে সেটা সরকারের পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হয়েছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, মূলত ব্যাংকের টপ ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে। এটা অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে। যদি এই পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব না হয় তাহলে দুর্নীতি আরও বাড়বে। আর এর ব্যাপক কুফল গিয়ে পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে।
এজন্য যারা দুর্নীতি করছে তাদেরকে শুধু গ্রেফতার করলেই হবে না। তাদের উপযুক্ত শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই অনেকাংশ দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে।
অনদিকে অনেকে আবার এ-ও বলেন, দুদক নাকি বেশি বাড়াবাড়ি করছে। এমন মনোভাব মোটেও সঠিক নয়। দুদক দুর্নীতি প্রতিরোধ করবে এবং দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেবে এটাই দুদকের কাজ। সেখানে কে কি বললো তাতেদুদকের কিছু যায় আসে না। আমি মনে করি, দুদক কাজ করছে সফলতাও পাচ্ছে। তবে দুদককে আরও অ্যাকটিভ হতে হবে।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, কমিশন দুর্নীতি প্রতিরোধে সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আমাদের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনায় ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি বন্ধের একটি প্ল্যান হাতে নিয়েছি। ব্যাংকিং খাতে যারা দুর্নীতি করবে তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে এই খাতের অনেক রাঘব বোয়ালকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। দুর্নীতি করে দেশের ক্ষতি করলে শাস্তি পেতেই হবে।
বাংলাদেশ সময়:১৮১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
এসজে/জেএম