ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বরিশালে ভাঙন রোধে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
বরিশালে ভাঙন রোধে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব বরিশালে ভাঙন রোধে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব-ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: বর্ষা আসার অনেক আগেই এবার ভাঙন শুরু হয়ে গেছে বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে।

এরই মধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, বসতভিটাসহ বহু স্থাপনা। হুমকির মধ্যে রয়েছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু, এয়ারপোর্ট এলাকা, বরিশালের বেলতলা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, রাস্তাঘাট ও স্কুল-কলেজসহ বহু স্থাপনা।

প্রতিবছর বর্ষায় নদীতীরের মানুষ ভিটেবাড়ি হারিয়ে নিস্ব হয়। কপালে জোটে কেবল সাহায্যের আশ্বাস। সে আশ্বাসে বুক বেঁধে প্রতীক্ষার প্রহর গুনলেও কোন ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা। বরিশালে ভাঙন রোধে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব-ছবি: বাংলানিউজপাশাপাশি সময় মতো বাঁধ সংস্কার না করা, নদীতীরে বাঁধ নির্মাণ না করা, নদীতে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করাসহ বিভিন্ন কারণে ভাঙন দিনকে দিন আরো তীব্র হচ্ছে। নদীপাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবার ঝুকিঁর মধ্যে থাকা মানুষজন এমন দাবিই করেছেন।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সারাবছরই দক্ষিণের এই অঞ্চলে নদীশাসন ও ভাঙন ঠেকানোর কাজ চলমান থাকে। পাশাপাশি পাইপ লাইনে নানা প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও দাবি করছেন তারা।

তাদের দাবি, নদীবেষ্টিত বরিশালে প্রায় সারাবছরই কম-বেশি নদীভাঙন চলতে থাকে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও অতিরিক্ত ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে কাজ করা হয়ে থাকে। ২০১৫ সালে বরিশালের বিভিন্ন উপজেলার ২৬ পয়েন্টকে ভাঙনপ্রবণ এলাকা হিসেবে শনাক্ত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

অপরদিকে নদীবেষ্টিত বরিশাল অঞ্চলের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় উল্লেখ করে ১১ টি প্রকল্পের প্রস্তাব অগ্রধিকার ভিত্তিতে দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এগুলেঅর বেশিরভাগই উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবের (ডিপিপি) আওতাধীন। পাশাপাশি কিছু রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ)-র আওতাধীন। কিছু প্রকল্পের যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে, আবার বেশ কটির যাচাই-বাছাই হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে ১টি পরিকল্পনা কমিশনে ও ১টি প্রি-একনেক সম্পন্ন করেছে। বরিশালে ভাঙন রোধে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব-ছবি: বাংলানিউজপ্রি-একনেক সম্পন্ন করা বরিশাল সদর উপজেলাধীন কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন থেকে চরবাড়িয়া এলাকা রক্ষা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

অপরদিকে, নদী ভাঙনরোধে অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাবুগঞ্জ উপজেলাধীন বরিশাল বিমানবন্দর ও তৎসলগ্ন মূল্যবান এলাকা সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা এবং মীরগঞ্জ ফেরিঘাট, মীরগঞ্জ বাজার এবং তৎসলগ্ন  মূল্যবান এলাকা আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা এবং আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজ সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্পের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা।   সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে বাবুগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর (দোয়ারিকা সেতু) রক্ষা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ১৫ লাখ টাকা (সড়ক ও জনপথের পক্ষে ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে বাস্তবায়নের লক্ষে প্রকল্প প্রণয়ন করে সওজ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে)। উপজেলার সন্ধ্যা নদীর ভাঙন থেকে রমজানকাঠী গ্রামবাংলা বিদ্যাপিঠ, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাইক্লোন সেন্টার, মসজিদ, মাদ্রাসা ও তৎসলগ্ন এলাকা রক্ষা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি ৮ লাখ টাকা। বাবুগঞ্জের দেহেরগতি ইউনিয়নের বাহেরচর বাজার ও তৎসলগ্ন এলাকা সন্ধ্যা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া-গবিন্দপুর রক্ষা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৯৫ কোটি টাকা। মুলাদী উপজেলার কাজীরচর ইউনিয়নের বাহাদুর গ্রাম কয়লা নদীর (খাল) ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। গৌরনদী উপজেলার গৌরনদী-আশোকাঠী নদীর ভাঙন থেকে সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে পালরদী মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত নদীতীর রক্ষা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

নদীভাঙন ছাড়া বরিশাল সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১ কোটি ৫১ লাখ টাকা, বরিশাল জেলার সাতলা বাগদা পোল্ডার নং ১,,৩ এর পুনর্বাসন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

পাশাপাশি মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলাধীন মাসকাটা নদীতে ক্রসবাঁধ নির্মাণ করে বরিশালের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। মোট ১১ টি প্রকল্পে ১৮.৭২ কিলোমিটার কাজ রয়েছে। এর মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১ হাজার ৩৫২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

তবে এসব প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই ভিটেবাড়ি, রাস্তাঘাট ফসলিজমিসহ অনেক কিছুই বিলীন হচ্ছে বরিশালের, সুগন্ধা, সন্ধ্যা, আড়িয়াল খাঁ, কীর্তনখোলা, মেঘনা, তেঁতুলিয়া, মাছকাটা, কালাবদর, কারখানাসহ ডজনখানেক নদীর ভাঙনে।

চরকাউয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি বলেন, নদী তার আপন মনে তীর ভাঙছে। এতে গরুত্বপূর্ণ স্থাপনা একের পর এক বিলীন হচ্ছে। কিন্তু কার্যত নদীভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ে না। তাই তারা নিজেরাই এবার ভাঙন রোধে উদ্যোগ নিয়েছেন। কাজ শুরু করেছেন।

কীর্তনখোলা নদীর চরকাউয়া পয়েন্টে জেলা পরিষদের প্রশাসকের নিজ উদ্যোগেও  শুরু হয়েছে পাইলিং-এর কাজ, পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে বাতিল হওয়া সিমেন্টর ব্যাগ ফেলছেন ভাঙন কবলিত স্থানে। এছাড়াও কীর্তনখোলা নদীর বেলতলা খেয়াঘাট সংলগ্ন পলাশপুর এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নিজ উদ্যোগে বালুর বস্তা ফেলার কাজ এগিয়ে চলেছে।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু সাঈদ বাংলানিউজকে বলেন, গুরুত্বপূর্ন স্থানগুলোকে নির্ধারণ করে অগ্রধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটিরই অগ্রগতি রয়েছে। অনুমোদন হলে এগুলোর কাজ শুরু হবে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ)-র অর্থায়নে জেলার বিভিন্ন স্থানে ৬টি প্রকল্প চলমান। এসব প্রকল্পের বেশ কটি শেষের পথে। এনডিআর বরাদ্দ থেকেও কাজ করা হচ্ছে। তবে আপাতত বর্ষাকালে আপদকালীন ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি হাতে নিয়ে রেখেছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
এমএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।