ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঘোড়া সওয়ারদের লড়াই ময়মনসিংহে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
ঘোড়া সওয়ারদের লড়াই ময়মনসিংহে ঘোড়া সওয়ারদের লড়াই ময়মনসিংহে, ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহের সার্কিট হাউজ মাঠ থেকে : ৪০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে ছুটছে প্রতিটি ঘোড়া। প্রতিটি ঘোড়ারই রঙ আর আকার ভিন্ন। কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান অবস্থা একেকজন ঘোড়‍ার সওয়ারের।

তারা নেমে পড়লেন অন্য রকম এক লড়াইয়ে। সবার দৃষ্টি ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠের মাঝখানে।

  

আবহমান বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য এ ঘোড় দৌড়কে ঘিরে শনিবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে এখানে বসেছিল মানুষের মিলন মেলা। বরাবরের মতো এবারো বাংলা নববর্ষকে ঘিরে এ নির্মল বিনোদনের আয়োজন করে ময়মনসিংহ পৌরসভা।

এ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে এদিন উৎসব আনন্দে মেতে উঠেছিল নগরীর বাসিন্দারা। তাদের বর্ষবরণ উৎসবে যোগ করে নতুন মাত্রা।

আধুনিকতার দাপটে হারিয়ে যাওয়া এ ঐতিহ্য উপভোগ করতে বাড়ির গৃহিণী থেকে শুরু করে জোয়ান-বুড়ো সবাই জড়ো হয়েছিলেন এ মাঠে।

মাঠের চতুর্দিক লোকে লোকারণ্য হওয়ায় অনেকেই আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ছাদে আবার অনেকেই গাছের মগডালে উঠে বসেন।

কদম ও দাপট দৌড়ে ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ঘোড়‍া সওয়াররা অংশ নেন। ৪০টি ঘোড়া প্রতিযোহিতায় অংশ নেয়।

মাঠের মঞ্চ থেকে ভাষ্যকার বার বার বলে যাচ্ছিলেন-‘কদম ভাঙলে পুরস্কার নয়। এ দৌড়ে চার পা একসঙ্গে চলবে। ’

ধীর গতির কদম দৌড় শেষেই শুরু হয় দাপট দৌড়। এ দৌড়ে গতির লড়াইয়ে নেমে যান একেকজন ঘোড়‍া সওয়ার। এ দৌড় শুরু হবার আগেই ভাষ্যকার বলছিলেন, সাবধান।

সবাই নিরাপদ দূরত্বে থাকুন। একেকটি ঘোড়া ছুটবে ৪০ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে।

ভাষ্যকারের মুখে এমন উচ্চারণের সময়েই শুরু হয় অন্য রকম উত্তেজনা। হর্ষধ্বনি আর উল্লাসে যেন কেঁপে উঠছিল সার্কিট হাউজ মাঠ। নিয়ম ভেঙে ঘোড়ার পেছনে পেছনে ছুটে চলতে দেখা যায় বাধভাঙা আনন্দে বিভোর তরুণের দল।
ঘোড়া সওয়ারদের লড়াই ময়মনসিংহে, ছবি: অনিক খান
এ ঘোড় দৌঁড় উৎসবের প্রধান অতিথি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া এ ঐতিহ্যের তাক লাগানো উপস্থিতিতে বিমুগ্ধ চিত্তে উপভোগ করছিলেন।

এ ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু। তিনি প্রতিযোগিতায় আসা দর্শনার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

তিনি বলেন, ‘দেশের সংস্কৃতির ঐতিহ্যময় ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা আবারো ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পুরনো এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমাদের এ প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। ’

পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলামও পৃথকভাবে গ্রামীণ খেলাধূলার এ প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে ময়মনসিংহ পৌরসভার এ আয়োজনের প্রশংসা করেন।

১ নং কদম দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হন মুক্তাগাছার শরীফুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ২১ ইঞ্চি কালার টেলিভিশন। ২ নং কদম দৌড়ে প্রথম মকবুল হোসেন ও ৩ নং কদম দৌড়ে প্রথম রুহুল আমিন পেয়েছেন ১৪ ইঞ্চি কালার টিভি ও বৈদ্যুতিক পাখা।  

১ নং দাপট দৌড়ে প্রথম রনি একটি ফ্রিজ, ২ নং দাপট দৌড়ে সেকান্দর ও ৩ নং দাপট দৌড়ে আবুল হাসেমও পুরস্কার জিতে নেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
এমএএএম/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।