ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সব বাস’ই সিটিং, হাফ-পাশ নাই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
সব বাস’ই সিটিং, হাফ-পাশ নাই  সব বাস’ই সিটিং, হাফ-পাশ নাই, ছবি: রানা

ঢাকা: উত্তরা থেকে মতিঝিল, গুলিস্তান, মিরপুর, গাবতলী, বনশ্রী, মাওয়া, পোস্তগোলা, মোহাম্মদপুর, সাভার, শনিরআখড়া, সায়েদাবাদ, আজিমপুর, সদরঘাট বা সাইনবোর্ড রুটে চলাচলকারী প্রায় সব বাসই চলছে সিটিং সার্ভিস হিসেবে।

কয়েকদিন এসব রুটে স্বাভাবিক মাত্রায় বাস না থাকলেও বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকেই রাস্তায় বাস নামিয়েছেন বাস মালিকরা। মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত ও সিটিং বিরোধী বিআরটিএ’র অভিযানের কারনে যে বাসগুলো লোকাল হিসেবে চলছিলো, তারা আবার ফিরে এসেছে সিটিং সার্ভিসে।


 
এসব রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাস মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। তবে সিটিং সার্ভিসের ফেরে পড়ে তাদের পকেট কাটা গেলেও পরিবহন সমস্যা আংশিক দূর হওয়ায় তারা আপাতত স্বস্তিতেই আছেন। কিন্তু বাস মালিকদের কাছে সরকারের নতজানু হওয়াকে ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত হিসেবেই মনে করছেন তারা।

যাত্রীদের অভিমত এ বিষয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানে যাওয়ার দরকার ছিলো। মালিকদের এই দৌরাত্মের জন্য অবশ্য তারা বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) দেউলিয়াপনা ও লুটপাট এবং ষড়যন্ত্রকেও দায়ী করেছেন।
 
বেসরকারি এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু সুফিয়ান বলেন, রাষ্ট্রীয় লোনে গণপরিবহন হিসেবে কেনা বাসগুলো বিআরটিসি কিভাবে বিভিন্ন অফিস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাড়া দেয়, এটা তাদের বোধগোম্য নয়। এমন অনৈতিক কাজ হচ্ছে প্রকাশ্যেই। বিআরটিসির ভাড়া দেওয়া এসব বাস সকালে ও বিকালে মাত্র দুটি নির্দিষ্ট ট্রিপ মেরে বাকি সময় অলস বসে থাকে। অথচ এই বাস গুলোর রাস্তায় থেকে বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহনের কথা ছিলো। রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বিআরটিসির বাস শূন্য হয়ে যাওয়ায় বাস মালিকরা যাত্রীদের জিম্মি করতে পারছে। সিটিংয়ের নামে দৌরাত্ম চালাতে পারছে।
সব বাস’ই সিটিং, হাফ-পাশ নাই, ছবি: রানা   
আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমান বন্দর যাবেন ওয়ালিউর রহমান। লোকাল বাসে যেতে সাড়ে তিন কিলোমিটারের এই দুরত্বে ভাড়া হওয়ার কথা বড় জোর তিন টাকা ৬০ পয়সা থেকে সাড়ে চার টাকা। যদিও এতোদিন তিনি এই পথ পাড়ি দিয়েছেন পাঁচ টাকায়। কিন্তু সিটিং বাসে এই পথে বাস স্টাফরা এখন ভাড়া নেন ১০ টাকা। তবে গাড়ি না থাকলে ৬০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে যাতায়ত করতে হয়। সে তুলনায় ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে চলাচল করাকেই নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছেন তিনি।
 
ফকিরাপুলে প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসা করেন তোফায়েল আহমেদ। প্রতিদিনই বাসে করে কর্মস্থলে যাতায়াত তার। উত্তরা থেকে মতিঝিল রুটের বাসে করে যাতায়াতের একমুখী ভাড়া ৩৫ টাকা থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত। তিনি জানান, সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় বিআরটিসি’র এসি বাসে। অন্যান্য বাস বেশি ভাড়া নিলেও সিটিং হিসেবে চলাচল করে। কিন্তু বিআরটিসি বাস চালায়, লোকাল ভিত্তিতে। ৫৫ টাকা ভাড়া নিলেও বাদুর ঝোলা করে যাত্রী বহনের কারনে অল্পদিনে বাসগুলোর অবস্থাও করুণ হয়ে গেছে।
 
আবার উত্তরা থেকে আজিমপুরে ভিআইপি সিটিং সার্ভিসের অবস্থা আরো বাজে। এ রুটে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। যেখানে লোকাল ভাড়া ২৫ টাকা। অথচ সমান দুরত্বে অন্যরুটে সিটিং ভাড়া আদায় করা হয় ৩৫ টাকা।
 
নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আশিকুর রহমান জানান, উত্তরা থেকে গুলিস্তান, মতিঝিল বা সদরঘাট রুটে চলাচলকারী বাসই তার নিয়মিত ক্যাস্পাসে যাওয়ার একমাত্র বাহন। আর এ রুটে চলাচলকারী প্রায় সব বাসই সিটিং সার্ভিস। এতে শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বড় সমস্যার সম্মুখীন হয়। কারন এসব বাসে হাফপাশ নাই।
 
৩ নম্বর সিটিং স্পেশাল বাসের চালক লিয়াকত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এ রুটের সিটিংয়ের প্রায় সব বাসই তেলে চলে। গ্যাসের বাস বলতে গেলে নেই। সিটিং করার সময় সবগুলো বাস মালিকরা নতুন বডি, সিট ও ডেকোরশনের মাধ্যমে সাজিয়েছেন। তাতেও বিনিয়োগ হয়েছে বড় অংক। অনেকে নতুন বাসও কিনেছেন। তাই ভাড়া একটু বেশি। তবে এতে যাত্রীরা আরামে যাতায়াত করতে পারছেন। আগে সব স্ট্যান্ডে বাসে জটলা তৈরি হতো। এখন যানজট অনেক কমেছে। আগে যেখানে সারাদিনে ৩ ট্রিপ মারা যেতো এখন তা ৬ থেকে ৭ ট্রিপে পৌঁছেছে।
 
তার সঙ্গে একমত অনেক যাত্রীও। তবে সিটিং চালু থাকার পাশাপাশি তারা রাস্তায় পর্যাপ্ত লোকাল বাসের ব্যবস্থা করার কথাও বলেছেন। একই সঙ্গে ভাড়ার পুনর্বিন্যাস ও নির্দৃষ্ট দূরত্বে স্ট্যান্ড নির্ধারণেরও কথা বলেছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
আরএম/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।