ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বিষণ্নতায় ভুগছে ঢাকা চিড়িয়াখানার বানরেরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
বিষণ্নতায় ভুগছে ঢাকা চিড়িয়াখানার বানরেরা বিষণ্নতায় ভুগছে ঢাকা চিড়িয়াখানার বানরেরা-ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ঢাকা চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করে বরাবর এগোলেই সবার আগে চোখে পড়ে বানরের খাঁচা। তবে বুধবার দুপুরে খাঁচার সামনে গিয়ে একটু থমকে যেতে হয়।

এদের সংখ্যা যে কমে গেছে তা প্রথম নজরেই বোঝা যায়। সবচেয়ে বড় এ খাঁচাটিতে ২৫ থেকে ৩০টি বানর অলস সময় কাটাচ্ছে।

একজন আরেকজনের শরীর থেকে উকুন বেছে দিচ্ছে। দুটি বানর বৈশাখের এই কাঠফাটা গরমে অল্প পানিতে বসে শরীর ঠান্ডা করা চেষ্টা করছে আবার ছোটোরা নিজেদের মধ্যে নানা রকমের খেলাধুলায় ব্যস্ত।

সবচেয়ে বড় এ খাঁচাটির বাকি অর্ধেকে কোনো বানর আপাতত নেই। বিষণ্নতায় ভুগছে ঢাকা চিড়িয়াখানার বানরেরা-ছবি: জিএম মুজিবুরদর্শকদের উপস্থিতি কম থাকাতেও তাদের ভেংচি কাটা বা বাঁদরামি চোখে পড়ার মতো নয়। বাদামী শরীরের মধ্যে লাল মুখগুলোকে কেমন যেন ফ্যাকাশে,মলিন।

চিড়িয়াখানার বানরগুলো কি তবে নিজেদের মধ্যে খেলা বা শারীরিক সম্পর্ক তৈরির আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে? চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. আব্দুর রাজ্জাক হ্যাঁ-সুচক জবাবই দিলেন।

বাংলানিউজকে তিনি জানান, বানরের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি সবারই চোখে পড়ছে। তবে আসল কারণ হচ্ছে, একসঙ্গে অনেক বাঁদরের বয়স বেড়ে যায়। অনেকেই বয়সের প্রান্তে এসে মৃত্যুবরণ করে, চলে যায়।

ঢাকা চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখন প্রায় দেড় শতাধিক বানর রয়েছে চিড়িয়াখানার খাঁচার ভেতরে ও বাইরে।

তিনি বলেন, এই বানরগুলো রেসাস প্রজাতির। এদের প্রজনন হারও ভাল। তবে একই পরিবেশে দীর্ঘদিন ধরে একই গোত্রের বানরগুলো নিজেদের মধ্যে ক্রসিং (মিলন) কম করছে। আর ইন-ব্রিডিং দীর্ঘদিন ভালো নয়, বংশগতি কমে যায়। তাই ভিন্ন পরিবেশ থেকে একই প্রজাতির বানর এনে ক্রসিং করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষণ্নতায় ভুগছে ঢাকা চিড়িয়াখানার বানরেরা-ছবি: জিএম মুজিবুরডেপুটি কিউরেটর বলেন, যশোরের কেশবপুর, মণিরামপুর, চাঁদপুর, ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের কিছু স্থানে বানর রয়েছে। সেখান থেকে কিছু ভাল ‍গুণসম্পন্ন বানর এখানে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে বনবিভাগের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলেই সংগ্রহ করা হবে।

ভিন্ন স্থান থেকে বানর সংগ্রহের বিষয়ে তিনি আরো জানান, প্রজাতি একই হলেও গোত্রভেদে জিনের বৈশিষ্ট্যগুলোর পার্থক্য থাকবে আরো বেশি। অনেকদিন থাকতে থাকতে এই বানরগুলো এখন পরিবারের মতো হয়ে গেছে, ক্ষীণকায়ও একটু। বোরড ফিল করছে নিজেরা। সেখানে ক্রস ব্রিডিং হলে স্বাস্থ্যবান ও চঞ্চল প্রকৃতির বানর পাওয়া যাবে।

রেসাস প্রজাতির এই বানরের বৈজ্ঞানিক নাম মাকাকা মুলাত্তা (Macaca mulatta)। ওরা গড়ে ৪ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এরা লম্বায় আড়াই থেকে তিন ফুট বা তার সামান্য একটু বেশি লম্বা হয়। আর লেজের দৈর্ঘ্য হয় আধা ফুট থেকে একফুট বা তার একটু বেশি। ওজন সাধারণত সাড়ে তিন কেজি থেকে সাড়ে ১২ কেজি পর্যন্ত।

পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো প্রজাতির মানবগোত্রীয় প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে রেসাস প্রজাতির এই বানরেরা। বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও চীনে-জাপানে এই বানরদের অস্তিত্ব রয়েছে। বিষণ্নতায় ভুগছে ঢাকা চিড়িয়াখানার বানরেরা-ছবি: জিএম মুজিবুরএই বুদ্ধিমান বানরেরা মানুষের আচরণ যেমন আয়ত্ব করতে পারে, তেমনি মানুষের সমাজেও বাস করতে পারে। এরা গাছের শেকড়. ফলমূল, বাদাম খেতে ভালবাসে। দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো এই বানরদের নেতৃত্বে থাকে একজন প্রভাবশালী নারী সদস্য। আর দলে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে নারীরাই পুরুষদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে।

বাংলাদেশ সময় ১৬১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৭
এমএন/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।