মা ওই দিনগুলোতে এভাবে হারিকেনে তেল ভরে রাখতেন বলেই আজ আমি এ অবস্থানে। ’
আবেগভরা স্বরেই এ কথাগুলো বলছিলেন।
তার সঙ্গে আলাপে ছিলেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আবাদুজ্জামান শিমুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও প্রশান্ত মিত্র। ছবি তুলেছেন সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট কাশেম হারুন।
সাক্ষাৎকারের প্রথমেই ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা বলেন জাহাঙ্গীর কবির। তার শৈশবের সবচেয়ে আবেগময় স্মৃতি জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর স্কুল জীবনে মায়ের আদর-মমতা-দায়িত্বশীলতার স্মৃতিচারণ করেন।
‘একটা স্মৃতি সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। স্কুল থেকে এসে পড়তে বসতাম। বিদ্যুৎ না থাকায় হারিকেন জ্বালিয়ে পড়াশোনা করতাম। প্রতিদিন আমার কাজ ছিল হারিকেনের গ্লাসটা পরিষ্কার করে রাখা। গ্লাসের একদিকে ফুঁ দিলে যে ভাপটা লাগতো, পরে কাপড় দিয়ে মুছলে এটা একবারে নতুনের মতো হয়ে যেত। আর মা আমার প্রতিদিন হারিকেনটাতে তেল ভরে রাখতেন। ’
কান্নাজড়িত কণ্ঠেই জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘মা এভাবে হারিকেনে তেল ভরে রাখতেন বলেই আমি পড়ালেখা শিখতে পেরেছি, এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। যেই মা জন্ম দিল, যেই মা মানুষ করলো...। মায়ের কাজটাই ছিল, ছেলে পড়াশোনা করবে বলে হারিকেনটাতে তেল ভরে রাখা। কিভাবে মায়ের এই ঋণ শোধ করবো?’
পরিবারে পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীর তৃতীয়। বলেন, ‘মা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর দুই বছর পর্যন্ত বাড়িতে অনেক ভিক্ষুক এসে তার জন্য কান্নাকাটি করতেন। ’‘২০১০ সালে আমার মা স্ট্রোক করেন, পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সেখানে মারা যান। যখন মাকে এলাকায় নিয়ে গেলাম, তখন আমাদের ইউনিয়নসহ ২৬ গ্রামের কমপক্ষে ২৬ হাজার মানুষ এসেছিলেন জানাজায়। ’
ঝিনাইদহের এই কৃতি সন্তান নিজ গ্রামের স্কুলেই পড়াশোনা করেন। এসএসসি পাশের পর ঢাকায় নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। তবে সেখানে হোস্টেল সুবিধা ছিল না। পরে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
স্মৃতি ঘেঁটে জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘স্কুল আর কলেজের ছাত্র জীবনটাই বেশি টানে। আমি খেলাধুলাটা একটু কমই করতাম, পড়ালেখাটাই বেশি করেছি। জীবনের প্রতিটি ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছি। আমার বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ছিল স্কুলে, হেঁটে যেতাম। যাওয়া-আসা, বন্ধুদের সঙ্গে বসে গল্প করা আর বাদাম খাওয়া- এই বিষয়গুলো সবসময়ই টানে। ’
ব্যক্তি জীবনে দুই সন্তানের বাবা জাহাঙ্গীর কবির ২০০৮ সালে মুন্সিগঞ্জ কারাগারে জেল সুপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ ও ২ হয়ে এআইজি হিসেবে কারা অধিদফতরে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর কুমিল্লা জেলা কেন্দ্রীয় কারাগার, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার হয়ে সিনিয়র জেল সুপার হিসেবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কর্মজীবন শুরু করেন।
জাহাঙ্গীর কবির পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের শেষ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং কেরানীগঞ্জে নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথম কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করতে পারার সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন।
(চলবে...সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব)
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
এজেডএস/এসজেএ/পিএম/এইচএ/