দীর্ঘ ৪৩ বছর কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি প্রায় ৭৫ হেক্টর আয়তনের চিড়িয়াখানাটিতে। সেই পুরনো অবকাঠামো দিয়েই চলছে।
দর্শনার্থীবান্ধব আধুনিক চিড়িয়াখানা গড়তে পরিকল্পনা নেওয়া হলেও বাস্তবায়িত হয়নি ডলফিন শো’ গ্যালারি। যেখানে দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হয়ে দেখবেন ডলফিনের খেলা।
থাইল্যান্ডের আদলে ঢাকার মানুষের চিত্ত বিনোদনে চিড়িয়াখানার ১৩ হেক্টরের দু’টি লেক ব্যবহার করে ডলফিন শো’র এ উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রায় চার বছর আগে।
মিরপুর চিড়িয়াখানা আধুনিক করতে ৩৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের আওতায় ডলফিন শো’ ছাড়াও লেক সাফারি গড়ার কথা ছিল, যেখানে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের আদলে চিড়িয়াখানার ভেতরে বন্য পশু-পাখির জলের উৎস সৃষ্টি ও মাছের বিচরণে জলাধার খনন করা হবে। জলাধার পারাপারে ঝুলন্ত সেতু ও কাঠের সাঁকো নির্মাণও থেমে আছে। দর্শনার্থীরা যখন সাঁকো পার হবেন, তখন সাঁকোর নিচে চলে আসবে লাল, সাদা, হলুদ ও কালো রঙের নানা প্রজাতির মাছের ঝাঁক। রাঙিয়ে দেবে দর্শনার্থীদের মন।
চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, সঠিকভাবে পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় উপস্থাপন না করায় সেখানেই ঘুরপাক খাচ্ছে প্রকল্পটি। ফলে ( জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতেও (একনেক) ওঠানো যাচ্ছে না।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ আধুনিক কিছু দেখতে চান। আমরা বিভিন্ন ধরনের গেম শো’র ব্যবস্থা করতে চাই। দর্শনার্থীরা পায়ে না হেঁটে চিড়িয়াখানার সকল কিছু দেখতে পারেন সে ব্যবস্থাও থাকবে’।
‘একটি গেট দিয়ে দর্শনার্থী প্রবেশে সমস্যা হচ্ছে। আরও একটি গেট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি হলে বেড়িবাঁধের পাশ দিয়ে অনেক দর্শনার্থী সহজে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে পারবেন। গ্যালারিতে বসে ডলফিন শো’ দেখানোরও পরিকল্পনা রয়েছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘জলহস্তি পানির নিচে থাকবে এবং দর্শনার্থীরা কাঁচের মধ্যে থেকে এগুলো দেখবেন। লেকের মধ্যে বোটিং ব্যবস্থাও থাকবে। যতো ধরনের বিউটিফিকেশন করা যায়, তার সবই এ উদ্যোগের আওতায় বাস্তবায়িত হবে’।
‘পুরনো প্রকল্পটি তাই ৩৪৮ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন ৪০০ কোটি টাকা’।
তবে কবে নাগাদ উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হবে, সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু বলতে পারেননি নজরুল ইসলাম।
১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীবজন্তুর প্রদর্শনশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় চিড়িয়াখানাটি। ১৯৭৪ সালে বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয় এটি। চিড়িয়াখানাটি উদ্বোধন ও সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন। ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি এটির নাম পরিবর্তন করে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাঘ, সিংহ ও ভালুকের খাঁচাগুলোরও ভগ্নদশা। রক্ষণাবেক্ষণ, উপযুক্ত পরিচর্যা ও অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক প্রাণীই রোগাক্রান্ত ও দুর্বল, যারা শুয়ে থাকলে আর দাঁড়াতে পারে না। অনেক খাঁচা আবার শূন্য। তিন বছর ধরে নতুন কোনো প্রাণীও কেনা হয়নি। শিপাঞ্জি কেনার পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়িত হয়নি। আফ্রিকা থেকে দুই জোড়া সিংহ ও ভারত থেকে দুই জোড়া ভালুক বিনিময়ের কথা থাকলেও এসব উদ্যোগ থেমে আছে।
ফলে ৩০ টাকায় টিকিট কেটে চিড়িয়াখানায় ঢুকে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর