ঢাকা, রবিবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মুক্তিপণ আদায়কারী আরও তিন চক্রের সন্ধান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
মুক্তিপণ আদায়কারী আরও তিন চক্রের সন্ধান সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভাগ্যান্বেষণে লিবিয়া যান ভৈরবের কমলপুর গ্রামের দীপু ইসলাম (২৮)। প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে এক বন্ধুর মাধ্যমে দেশটিতে যান তিনি। এর ছয় মাস পর লিবিয়া থেকে ইতালি যাচ্ছিলেন দীপু। পথে গাড়ি থেকে অপহৃত হন তিনি।

সেখানকার বাংলাদেশি দালাল চক্র তাকে বন্দিদশায় রেখে পরিবারের কাছে দাবি করে মোটা অংকের মুক্তিপণ। বাড়িতে ফোন করে শোনানো হয় দীপুর আর্তনাদ।

দীপুর জীবন বাঁচাতে পরিবার সদস্যা তোড়জোড় শুরু করেন মুক্তিপণের টাকা যোগাড়ের জন্য। এমনটাই বললেন, প্রবাশী দীপু ইসলামের বড় ভাই কাজী জাহাঙ্গীর।

তিনি বলনে, মুক্তিপণের টাকা চেয়ে ফোনে দীপুর চিৎকার শোনানো হতো। আমার ভাইকে ওরা অনেক নির্যাতন করেছে। পরে তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেয় আমাদের। সেই অ্যাকউন্টে দুই দফায় দুই লাখ টাকা পাঠানোর পর দীপুকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। একমাস হলো দীপু ইতালিতে আছে বলে আমাদের জানিয়েছে।

লিবিয়াতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের অপহরণের পর ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করছে আন্তর্জাতিক অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। এমন ৮/১০ জন ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

চক্রের সদস্যরা অপহরণের পর মানি লন্ডারিং করে বিপুল পরিমাণে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও জানিয়েছে সিআইডি পুলিশ।

গত ২২ এপ্রিল মাদারীপুরের শিবচর জেলায় ব্র্যাক ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক শাখায় ৩টি সঞ্চয়ী হিসাবের তদন্ত করে ১ মহিলাসহ আন্তর্জাতিক অপরহণকারী চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামিরা হলেন- মুজিবুর জমাদ্দার (৪৫), তার স্ত্রী নুরজাহান (৩৯) ও তার জামাতা হান্নান মিয়া (৩২)। আটকদের তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা জব্দ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। তাদের তিনজনকে ৩ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম টিম বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মোল্যা নজরুল ইসলাম।

তিনি জানান, এমন তিনটি চক্রের সন্ধ্যান পাওয়া গেছে যারা লিবিয়া, সৌদিআরব ও মালয়েশিয়াতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অপহরণ করে মানি লন্ডারিং করছে। তারা দেশে ও বিদেশে তাদের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করছে।

মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, এরা বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অপহরণ করে, আটকে রেখে দেশে থেকে মুক্তিপণ দাবি করে। সেই টাকা আদায়ের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। এই চক্রের মূল হোতা মুজিবুর জমাদ্দার লিবিয়ায় ছিলেন। সেখানে সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সঙ্গে এমন কাজ করতেন। ৬ মাস আগে দেশে ফিরে মুক্তিপণের টাকা কালেকশনের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।
     
একটি টিম ব্যাংকের হিসাব নম্বর ধরে তদন্ত শুরু করে চক্রটিকে মাদারীপুরের শিবচর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিআইডি বাদী এই প্রথম মানি লন্ডারিংয়ের মামলা করেছে, যোগ করেন নজরুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।