ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আলামত নষ্ট করতেই রেললাইনে লাশ

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৮ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
আলামত নষ্ট করতেই রেললাইনে লাশ

ঢাকা: গত ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনের হোম সিগন্যালের কাছ থেকে একটি ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা রেলওয়ে থানা (কমলাপুর) পুলিশ। ওই মরদেহ দেখে প্রথমেই পুলিশ ধারণা করেছিলো, কোনো দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার ঘটনা এটা।

ওই ঘটনায় ওইদিন (০৬ ডিসেম্বর) রাতেই ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা (নম্বর ২৭৮/১৬) দায়ের করা হয়।

মামলাটির তদন্ত করেন বিমানবন্দর রেলওয়ে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলী আকবর।

লাশ উদ্ধারের পরই তিনি শুরু করেন তদন্ত কার্যমক্র। তদন্তে অজ্ঞাত পরিচয় ওই লাশের নাম ও পরিচয় পাওয়া যায়। তার নাম তানজিল হাসান মুন্না (১৯)। পিতার নাম লাল মিয়া। বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার ভাতশালা গ্রামে। বর্তমান ঠিকানা গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ক্যান্টনমেন্ট বাজারের নয়নপুর গ্রাম।

মরদেহ উদ্ধারের পর তার সুরতহাল প্রতিবেদনসহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়।  

চলতি বছরের মার্চ মাসে রেলওয়ে থানা পুলিশ এই মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পায়। ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আ খ ম শফিউজ্জামান এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন- ‘এটি অপমৃত্যু নয়, একটি হত্যাকাণ্ড। ’

ময়নাতদন্তের ওই প্রতিবেদনে লেখা ছিলো ‘-In my opinion death was due to Aspasia result of smothering & throttling wore was ante mortem & homicidal in nature. যাহা নরহত্যাজনিত ঘটনা। ’

এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির হত্যাকারীকে গ্রেফতারের জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে চলতি বছরের ৮ মার্চ ঢাকা রেলওয়ে থানায় ৩০২ ধারা অনুযায়ী একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিমানবন্দর রেলওয়ে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলী আকবর বাংলানিউজকে বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর অপমৃত্যু মামলা হলেও ময়নাতদন্তের পর প্রমাণ মিলেছে, এটি হত্যাকাণ্ড।

এ হত্যার ঘটনায় খুনিদের গ্রেফতারের তদন্ত কার্যক্রম চলছে বলেও জানান তিনি।
 
এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। হত্যার পর দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে লাশ ফেলে রাখা হচ্ছে রেলওয়ে লাইনে অথবা তার পাশে কোনো স্থানে। মূলত আলামত নষ্ট করতেই এসব করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা রেলওয়ে থানা পুলিশ।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, খুনিরা হত্যার পর রেললাইনে লাশ ফেলে রাখে, যদি ট্রেনে কাটা পড়ে তবে লাশটা ছিন্নবিচ্ছিন্ন ও চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। এতে খুনের আলামত নষ্ট হয়ে যায়। তখন এটি হত্যা নাকি দুর্ঘটনা সেটি বোঝা যায় না।

ঢাকা রেলওয়ে থানার (কমলাপুর) তথ্য মতে, ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত রেলওয়ে থানায় এমন ১৭টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর এসব ঘটনায় লাশ উদ্ধারের সময় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা হলেও ময়নাতদন্তের পর লাশের ‘ভিসেরা রিপোর্ট’ পর্যালোচনা করা হয়। পরে ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানার অফিসার্স ইন-চার্জ (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, আলামত নষ্ট করতেই খুনিরা হত্যার পর লাশ রেলওয়ে লাইনে ফেলে রাখে। যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মনে করে এটি অপমৃত্যু।

কিন্তু এসব ঘটনায় মরদেহ উদ্ধারের পর আমরা তা ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেকে পাঠিয়ে থাকি। সেই প্রতিবেদনে ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করছি।  

তবে আমরা এসব লাশ উদ্ধারের পর ওই ঘটনার তদন্ত করছি। এসব ঘটনার হত্যাকারীরের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
এসজেএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।