অন্তত ৪৭ জন এমপি বরাদ্দকৃত বাসায় না থেকেও এভাবে বাসার দখল রেখেছেন। তাদের প্রত্যেকের নামে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ যারা এমপি হিসেবে বরাদ্দকৃত বাসায় থাকেন না, তাদের বাসা ছেড়ে দিতে হবে। সেই নির্দেশ বাধ্যতামূলক। আমরা ২৮/৩০ জন এমপিকে চিঠি দিয়েছি। এর মধ্যে একজন মন্ত্রী রয়েছেন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে। এরপর উত্তর না পেলে আমরা স্পিকারের নেতৃত্বে ওইসব এমপিদের ডেকে বলবো বাসা ছেড়ে দিতে। আশা করি, এরপর আর কেউ না থেকে বাসা দখলে রাখবেন না।
তিনি বলেন, অনেক এমপি আমাদের চিঠির জবাব দিয়েছেন। কেউ বলেছেন বাসায় থাকি, কেউ বলেছেন ফ্যামিলি থাকে। আবার কেউ বলেছেন ছেড়ে দেব। এখন পর্যন্ত ৪ জন এমপি বলেছেন তারা ছেড়ে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী বলার পর এটা তো বাধ্যতামূলক, এরপর তো আর চিঠির প্রয়োজন হয় না, তারপরেও আমরা চিঠি দিয়েছি। দেখি তারা কী উত্তর দেয়, যদি কেউ গোপন করে সেটাও তদন্ত করা হবে।
যদিও কমিটির কার্যপত্রে দেখা যায় ৪৭ জন এমপি অবৈধ দখলে রেখেছেন তাদের বাসা। এর হলেন-নজরুল ইসলাম বাবু, ফ্ল্যাটে নিজে না থেকে কাজের লোক রাখেন।
এমপিদের কার বাসায় কে থাকেন:
মানিকমিয়া অ্যাভিনিউয়ের ১ নং ভবনে। এ কে এম ফজলুল হকের ফ্ল্যাটে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস)। মো. আনোয়ারুল আজীমের বাসায় থাকেন তার পিএস। নিজাম উদ্দিন হাজারী ফ্ল্যাটে থাকেন তার কাজের লোক। মো. ইউনুস আলী সরকার ফ্ল্যাটে এলাকার লোক। কাজী কেরামত আলীর বাসায় অফিসের লোক। মো. আলী আসগরের বাসায় তার পিএস। তাহজীব আলম সিদ্দিকীর বাসায় তার পিএস। মো. আব্দুল ওয়াদুদ এর ফ্ল্যাটে তার পিএস থাকেন।
ভবন-২ এ দেখা যায় ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের বাসায় থাকেন তার কাজের লোক আর দিদারুল আলমের বাসায় তার পিএস। শেখ আফিল উদ্দিনের বাসায় তার পিএস, মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বাসায় তার পিএস, এনামুল হকের বাসায় অফিসের লোক, কামরুল আশরাফের খানের বাসায় পিএস, বেগম লুতফা তাহেরের বাসায় কাজের লোক, আবু সালেহ মোহাম্মদ সাঈদের বাসায় তার পিএস, মো. আমির হোসেনের বাসায় তার পিএস, শিরিন নাইমের বাসায় তার গাড়িচালক, শেখ হেলালের বাসায় তার পিএস’র পরিবারবর্গ, কাজী রোজীর বাসায় তার পিএস, লায়লা আরজুমান বানুর বাসায় তার পিএস, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বাসায় কাজের লোক এবং বেগম মেরিনা রহমানের বাসায় তার পিএস।
৪নং ভবনে মন্ত্রী ছায়েদুল হকের বাসা বন্ধ থাকে। অধ্যাপক ডা. এম আমানউল্লাহর বাসায় তার আত্মীয় থাকেন, পংকজ নাথের বাসায় পিএস, শওকত আলীর বাসায় তার পিএস, মো. আব্দুল্লাহর বাসায় পিএস, মন্ত্রী মো. শাজাহান খানের বাসা বন্ধ থাকে, প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিংয়ের বাসা বন্ধ থাকে।
ভবন-৫ এর ফ্ল্যাটের মধ্যে মো. একাব্বর হোসেনের বাসায় তার পিএস, ওমর ফারুক চৌধুরীর তার পিএস, এইচ এম ইব্রাহীম নিজে থাকেন না, বেগম জেবুন্নেছা আফরোজের বাসায় তার পিএস, মৃণাল কান্তি দাসের বাসায় তার পিএস, আলী আজমের বাসায় তার পিএস, ধীরেন্দ্র দেবনাথের বাসায় তার পিএস, ফখরুল ইমামের বাসায় তার পিএস, জাহাঙ্গীর কবির নানক নিজে থাকেন না, নূরনবী চৌধুরীর বাসায় তার পিএস, আফসারুল আমীনের বাসায় তার পিএস, বেগম আয়েশা ফেরদাউস বাসায় নিজে থাকেন, মাঝে মধ্যে পিএস, শামীম ওসমানের বাসায় তার পিএস, মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বাসায় তার পিএস, শেখ হাফিজুর রহমানের বাসায় তার পিএস এবং শেখ ফজলে নূর তাপসের বাসায় বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রীর ভাই পরিবার নিয়ে থাকেন।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ও শৈ সিংসহ ৪৭ জন এমপির নামে ইতোমধ্যেই চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এদের প্রত্যেককে আগামী ৭ দিনের মধ্যে চিঠির জবাব দিয়ে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (০৩ মে) সংসদ কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ তার অফিসে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৭/আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা
এসএম/এমজেএফ