ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

'গেছো মেয়ে'কে 'বেটি তুমি চালাও'

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
'গেছো মেয়ে'কে 'বেটি তুমি চালাও' সুলতানা রাজিয়া

তেঁতুলিয়া থেকে: বুধবার সকালে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে তেঁতুলিয়া বাজারের দিকে যাচ্ছিলাম গাড়িতে। একটি পালসার ১৫০ সিসি'র মোটরসাইকেল সাই সাই বেগে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। হেলমেটের নিচে বেঁধে রাখা ওড়না এবং পরনের সেলোয়ার কামিজ বলে দিচ্ছিল, ইনি একজন নারী চালক।

বিকেলে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে দেখা হয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়ার সঙ্গে। প্রায় ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি দীর্ঘদেহী সংরক্ষিত নারী আসনের এই ভাইস চেয়ারম্যান আন্তরিকতার হাসি দেন।

অফিসে বসে শোনান তার রাজনীতি এবং মোটরসাইকেল চালনার কথা।

৩৮ বছর বয়সী রাজিয়া ১২-১৩ বছর বয়সেই সাইকেল চালনা শেখেন রাজনীতিবিদ বাবা সবারউদ্দিন প্রধানের কাছে। একই সময়ে মোটরসাইকেল চালনাও শিখে নেন। তখন স্কুটি চালালেও এখন সব ধরনের মোটরসাইকেল চালান।

বাংলানিউজকে বলেন, এই অঞ্চলে মেয়েরা এমনি ভাল সাইকেল চালায়। আমি মোটরসাইকেলটাও শিখেছি। নিজের পরিবহনের স্বাধীনতা একজন নারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোথাও যাওয়ার জন্যে অন্তত পুরুষের উপর নির্ভর করতে হয় না।

১৯৯৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণের পর আর পড়াশোনা করা হয়নি রাজিয়ার। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন অনেকদিন। এরপর আসেন রাজনীতির মঞ্চে। ২০০৯ সালের পর ২০১৪ সালেও নির্বাচনে জয় পান তিনি।

বলেন, আমার মোটরসাইকেল চালনা অনেকেই পছন্দ করতেন না। বিশেষ করে পুরুষ সহকর্মীরা। কিশোরী বয়স পর্যন্ত অনেকেই 'গেছো মেয়ে' বলেও ডাকতেন। মুরুব্বিরা চালাতে মানা করতেন। তবে যখন ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনে জিতলাম সবাই বললেন, 'বেটি তুমি চালাও। 'সুলতানা রাজিয়া

তবে বাংলাদেশের সড়কে নারীদের মোটরসাইকেল চালনা এখনো সহজ নয় বলে জানান তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, পুরুষ চালকরা কখনো পেছনে পড়তে চায় না। এটা তারা মেনে নিতে পারেন না। অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাশ কাটিয়ে সামনে এগোতে চায়। আমি তখন তাদের ধরে ফেলি। শিক্ষা দিয়ে ছাড়ি। এখন আর আমার উপজেলায় এমনটি ঘটে না। যারা চেনে না, তারা এ ধরনের বাজে কাজ করে, বাজে মন্তব্য করে। এ ধরনের বদ লোকদের আমি ছাড় দেই না।

কখনোই হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালান না তিনি। বলেন, এটা নিরাপত্তার জন্য অবশ্য জরুরি। এখন পর্যন্ত কোন দিনই দুর্ঘটনার শিকার হইনি। তবে সবসময় গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনা। ১০০ এর উপরও উঠে যায়।

৩৮ বছর বয়সী সুলতানা বলেন, রাজনীতিবিদ নারীর জন্য মোটরসাইকেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এলাকায় কিছু ঘটলে নিজেই চালিয়ে যাই। আবার প্রয়োজনে গাড়ি থামিয়েই কারো সঙ্গে আলাপ করে নেয়া যায়। আবার ছুটে চলা যায়। এলাকাবাসী কাছে পান দ্রুত। নির্বাচনী প্রচারণায় মোটরসাইকেলে তিনজন করে বসা হয়। আমার মোটরসাইকেলের পেছনেও দুজন নারী কর্মী বসতেন। যে এলাকাতে যেতাম সব নারীরা চলে আসতেন, আমাকে উৎসাহ দিতেন।

নির্বাচনের আগেও মোটরসাইকেল চালনার সময় থ্রি-পিছের ওপর দিয়ে শার্ট গায়ে দিতাম আর প্যান্ট পড়তাম। মানুষ বুঝতে চাইতো না যে, মোটরসাইকেল চালনার সময় শার্ট গায়ে দিলে আরামদায়ক হয়। আমি পরিচিতদের বুঝাতে চেষ্টা করি, অনেকেই বুঝেন। আবার প্যান্ট নিয়ে আপত্তি তোলেন। পরে এখন শার্ট আর প্যান্টটা বাদ দিয়েছি নির্বাচনের পর থেকে।

সুলতানার স্বামী সাদাক্কাল আলী সরকার স্থানীয় কালান্দিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বড় মেয়ে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়েন এবং ছেলে রংপুরে নবম শ্রেণীর ছাত্র। স্বামী সবসময়ই রাজনীতি এবং ব্যক্তিজীবনে সহযোগিতা করেছেন এবং উৎসাহ যুগিয়ে গিয়েছেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।