ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘না ভোট’ পুনঃপ্রবর্তনসহ কিছু আইন সংস্কার চায় সুজন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৭ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৭
‘না ভোট’ পুনঃপ্রবর্তনসহ কিছু আইন সংস্কার চায় সুজন

ঢাকা: নির্বাচনে ‘না ভোট’ দেওয়ার বিষয়টি আবারও আইনে ‍অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচন কমিশন যেন তার আইন আরো যুগোপযোগী করে সেই মর্মে দাবি তুলেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একই সঙ্গে সংস্থাটি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধান সংস্কারেরও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও দিয়েছে।

সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার (০৯ মে) প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করে লিখিত আকারে প্রস্তাবগুলো দাখিল করে।

সুজন তার লিখিত প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে, ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় একটি ছবিযুক্ত সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়নের সময় পুরুষের তুলনায় ১৪ লাখের বেশি নারী ভোটার অন্তর্ভূক্ত ছিল।

কিন্তু বর্তমানে ‘জেন্ডার-গ্যাপ’ দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ খসড়া হালনাগাদের তথ্যানুযায়ী, মোট ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭২ জন ভোটার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে নারী ভোটার মাত্র পাঁচ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬০ জন। অর্থাৎ নারী-পুরুষের অনুপাত ৪০:৬০ এবং জেন্ডার-গ্যাপ ২০ শতাংশ।

নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ কয়েকটি সুস্পষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে করা হয়। যেসবের একটি হলো সংসদীয় আসনগুলোতে ভোটার সংখ্যায় যতদূর সম্ভব সমতা আনা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৮৭টি নির্বাচনী এলাকায় সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়ছে। এতে ভোটার সংখ্যায় অসমতা আরও বেড়েছে। যা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড উভয়েরই লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে সুজন।

এদিকে সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হলে আইনি কাঠমোতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সংস্থাটি বলেছে, ‘না-ভোটে’র বিধানের পুনর্প্রবর্তন, মনোনয়নপত্র অনলাইনে দাখিলের বিধান, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা ও আয়কর বিবরণী দাখিলের বিধান, সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া ও রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক সদস্যদের নাম ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও নিয়মিত আপডেট করার বাধ্যবাধকতা রাখা দরকার।

এদিকে মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধে অনলাইনে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার বিধান থাকাও জরুরি।
রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধি রাখারও বিধান করা হয়েছিল, যা রাজনৈতিক দলগুলো অমান্য করেছে- এমন অভিযোগও করেছে সংস্থাটি।

নির্বাচনী বিরোধ মীমাংসার জন্য উচ্চ আদালতের সহায়তায় বিশেষ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করার করতে হবে। এছাড়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে একটি হলফনামা দাখিল করতে হয়। কিন্তু অনেক প্রার্থী অসত্য ও অসম্পূর্ণ তথ্য দাখিল করে থাকেন, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারপরেও তারা সম্পদের যে বিবরণী দেন, তাতে অর্জনকালীনমূল্য থাকে না। তাই হলফনামার ছকটিতে পরিবর্তন আনতে হবে এবং হলফনামায় প্রদত্ত তথ্যগুলো কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।  

আবার প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাই তাদের দাখিল করা নির্বাচনী ব্যয়ের তথ্যসমূহ নীরিক্ষণ করাও জরুরি বলে প্রস্তাব রাখে সুজন।

বর্তমানে স্থানীয় সরকারের অন্যান্য স্তুরে হলফনামা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদে এরকম আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও প্রার্থীকে হলফনামা দেওয়ার বিধান যুক্ত প্রয়োজন।

অন্যদিকে সংবিধানের আলোকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশরারদের নিয়োগের জন্য একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়নেরও দাবি রাখে সংস্থাটি।

এছাড়া নির্বাচনে সহিসংতা রোধ, নির্বাচনী ব্যয়সীমা কমিয়ে আনা, বিদেশে দলগুলোর কোনো শাখা না রাখা বিধানে যথাযথ প্রয়োগ, স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচারণার জন্য আচরণবিধি প্রণয়নেও দাবি রাখে সুজন।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম ও বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, ড. হামিদা হোসেন, ড. তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৮ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৭
ইইউডি/এসএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।