ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘বাবা চাননি রাজনীতিতে আসি’

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫১ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
‘বাবা চাননি রাজনীতিতে আসি’ আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিম রাজ্জাক- ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করার পর তার বড় ছেলে নাহিম রাজ্জাক দায়িত্ব পান শরীয়তপুর-৩ আসনের। ২০১২ সালে উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রথমবারের মত রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। এরপর ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

সোমবার (০৮ মে) বনানীতে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাংলানিউজের সঙ্গে তার একান্ত আলাপচারিতা হয়। তা থেকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রস্তুতি ও রাজনীতিতে আসার গল্প বাংলানিউজের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো:

বাংলানিউজ: তরুণদের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে আপনি কতটুক ভূমিকা রাখতে পেরেছেন?
নাহিম রাজ্জাক: আমাদের তরুণদের ভাবনা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী অনেক প্রেরণা দেন।

আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠির বড় অংশই তরুণ সমাজ। এই তরুণদের সমাজের কাজে লাগিয়ে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

বাংলানিউজ: প্রধানমন্ত্রী আপনাদের তরুণ এমপিদের নিয়ে আলাদাভাবে কখনও বসেছেন কী?
নাহিম রাজ্জাক:  তাঁকে(প্রধানমন্ত্রী) অনেক ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। কাজেই ওভাবে না বসলেও আমাদের চিন্তাভাবনাগুলোকে তার কাছ বরাবর পৌঁছানোর সুযোগ প্রধানমন্ত্রী উন্মুক্ত রেখেছেন। আমরা যদি কোনো কিছুতে নতুনত্ব আনতে চাই, এবং সেই কথাগুলো যদি তাঁর কাছে পৌঁছে দিই, তখন তিনি কিন্তু সাধুবাদ জানিয়ে অনুপ্রেরণা দেন।
আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিম রাজ্জাকের পাওযা বিভিন্ন পদক- ছবি: ডিএইচ বাদল
বাংলানিউজ: এমপি হিসেবে আপনার বাবার ভাবনাগুলো কতটুক করতে পেরেছেন?
নাহিম রাজ্জাক: একটি আধুনিক শরীয়তপুর গড়ে তোলার জন্য আমার বাবার যে প্রজ্ঞা, চিন্তভাবনা ছিল সেসবের বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।

বাংলানিউজ: আপনার বাবার অসমাপ্ত কাজগুলোর অগ্রগতি কী?
নাহিম রাজ্জাক: আধুনিক শরীয়তপুর গড়তে হাইটেক পার্ক, নার্সিং ইনস্টিটিউট করা হচ্ছে। আব্দুর রাজ্জাক স্পোর্টস ইনস্টিটিউট নির্মাণ করছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক জায়গাগুলোতে তিন মাসের মধ্যে ফ্রি ওয়াইফাই জোন করে দেব।

বাংলানিউজ: আপনার জায়গা থেকে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় তরুণদের কিভাবে কাজে লাগাবেন?
নাহিম রাজ্জাক: দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করতে হলে ইয়ুথ কমিউনিটি বিল্ডিং করতে হবে। কারণ জঙ্গিদের টার্গেট থাকে তরুণ সমাজের দিকে। এজন্য প্রতিভাবান তরুণদের এক প্লাটফর্মে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সেই চিন্তাভাবনা থেকে ২০১৪ সালে ইয়াংবাংলা বা ইয়ুথ প্লাটফর্ম সৃষ্টি করি। যার কনভেনার আমি।

বাংলানিউজ: প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় তরুণ এমপিদের নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করেন কি?
নাহিম রাজ্জাক: তিনি (জয়) আমাদের সঙ্গে বসেন, অনুপ্রেরণা যোগান। আমরা তাঁর চিন্তাভাবনারও প্রতিফলন ঘটাই।
 
বাংলানিউজ: দুইবারই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছেন। আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাতাপূর্ণ হওয়ার আভাস রয়েছে। সেক্ষেত্রে নিজেকে কতটুক প্রস্তুত করেছেন?
নাহিম রাজ্জাক: আমার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমার এলাকার মানুষদের কেউ দুইবারের একবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। এলাকার মানুষ আমাকে গড়ে ওঠার জন্য অতিরিক্ত সময় দিয়েছেন। এই সুযোগটাকে আমি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। সুযোগের সদ্ব্যবহার কতটুক করতে পেরেছি সেটার মূল্যায়ন আগামী একাদশ নির্বাচনে মধ্য দিয়েই প্রতিফলিত হবে। নিজেকে একজন সংসদ সদস্য বলে পরিচয় দেওয়ার চেয়ে আমার প্লাস পয়েন্ট আমি আব্দুর রাজ্জাকের সন্তান।
আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিম রাজ্জাক- ছবি: ডিএইচ বাদলবাংলানিউজ: আপনার রাজনীতিতে আসার গল্পটা যদি বলেন।
নাহিম রাজ্জাক: আমার রাজনীতিতে আসার পেছনে অনেকখানিই কারণ বাবার। যদিও বাবা জীবত থাকাকালীন কখনও চাননি রাজনীতিতে আসি। বাবা একটা কথাই বলতেন, ‘তুমি তোমার যোগ্যতা দিয়ে যদি রাজনীতিতে আসতে চাও, তাহলে এসো। আর মানুষ যদি তোমাকে গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে তুমি আসতে পার। আমি (রাজ্জাক) জীবিত থাকা অবস্থায় তুমি কাজ করে যাও। তবে রাজনীতিতে পা রাখার দরকার নেই। ’ বাবা জীবিত থাকার সময় রাজনীতিতে নামার সুযোগটা দেননি।

বাংলানিউজ: কেন তিনি আপনাকে রাজনীতিতে আনতে চাননি একটু বলবেন কী?
নাহিম রাজ্জাক: বাবা হয়তো ভেবেছিলেন, আমি যেহেতু দেশের বাইরে পড়াশোনা করেছি, সেহেতু দেশের রাজনীতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবো না। বাইরে ভাল একটা চাকরি করেছি। সেটাতেই যেন ক্যারিয়ার গড়ি।

বাংলানিউজ: আগামী নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
নাহিম রাজ্জাক: আমাদের কাজের মূল্যায়ন মানুষ ভোটের মাধ্যমে করবে। তবে উন্নয়নই একমাত্র মাপকাঠি নয়। একজন এমপি হিসেবে ব্যক্তি-ইমেজ, মানুষের সাথে সম্পৃক্ততা, সফলতা, ব্যর্থতা সবই মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলানিউজ: জাতীয় অনেক ইস্যুতেই আপনাদের তরুণদের ভূমিকা খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না, যেমনটি ছিল আপনার বাবার।
নাহিম রাজ্জাক:  এখন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আছেন, তারাই বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন। আমাদের সময় আসবে আরও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কাজ করার।

নাহিম রাজ্জাক শিক্ষাজীবন শেষ করে যুক্তরাজ্যে মার্কেটিং বিষয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর গ্রেনেড হামলায় তাঁর ‍বাবা আব্দুর রাজ্জাক গুরুতর আহত হন। এরপর যুক্তরাজ্যের কর্মজীবনে ইস্তফা দিয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং রাজনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
এসএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।