ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ওজন বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা লুটতে চিংড়িতে বিষাক্ত জেলি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৩ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
ওজন বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা লুটতে চিংড়িতে বিষাক্ত জেলি! বগুড়ায় চিংড়িতে বিষাক্ত জেলি। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: খুলনাসহ বিভিন্ন মোকাম থেকে চিংড়ি নিয়ে আসছেন বগুড়ার মাছ ব্যবসায়ীরা। বাড়তি মুনাফা লুটতে কতিপয় ব্যবসায়ী বিষাক্ত জেলি ঢুকাচ্ছেন চিংড়ির খোলসে। সিরিঞ্জ ব্যবহার করে কাজটি করছেন তারা। জেলি ঢুকানোয় বেড়ে যাচ্ছে চিংড়ির ওজন।

চিংড়ির সঙ্গে জেলির রঙ মিশে যাওয়ায় সহজে টের পাচ্ছেন না ক্রেতা সাধারণ। অত্যন্ত কৌশলে এসব ব্যবসায়ী ঠকাছেন ক্রেতাদের।

প্রতিকেজি বড় আকারের চিংড়িতে বিষাক্ত জেলির অস্তিত্ব মিলছে সর্বোচ্চ ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জন্ম দিতে পারে নানা রোগের।
 
কারণ বিষাক্ত এই জেলি ভাতের মাড়, আটা, পাউডারসহ আনুসাঙ্গিক কেমিক্যাল মিশিয়ে স্থানীয়ভাবে বানানো হচ্ছে। গোপনে পুশ করা হচ্ছে চিংড়িতে। সেই চিংড়ি ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।  
 
বগুড়া পৌরসভার সেনেটারি ইন্সপেক্টর শাহ আলী খানের সঙ্গে আলাপকালে চিংড়ি ব্যবসায়ীদের অসাধু কারবার সম্পর্কে বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
 
মূলত ঘটনাটি ধরা পড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকালে। মঙ্গলবার (৯ মে) শহরের ফতেহ আলী ও চাষী বাজারে জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বের আলমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত সততা মৎস্য আড়তসহ অপর আরো তিনজন মাছ ব্যবসায়ীর দোকানে অভিযান পরিচালনা করেন।
 
চিংড়িতে বিষাক্ত জেলি ব্যবহার করার দায়ে মাছ ও মাছজাত দ্রব্য পরিদর্শন এবং মান নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮৩ আইন অনুযায়ী, তাদের কাছ থেকে ৬০ কেজি চিংড়ি জব্ধ করা হয়। পাশাপাশি পৃথকভাবে তাদের কাছ থেকে মোট ৪০ হাজার টাকার জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ অভিযানের মধ্য দিয়ে শহরে মাছ ব্যবসায়ীদের চিংড়িতে বিষাক্ত জেলির ব্যবহারের এই ভয়াবহ চিত্র ওঠে আসে।
 বগুড়ায় চিংড়িতে বিষাক্ত জেলি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের ফতেহ আলী বাজারে নানা প্রজাতির মাছের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মোকাম থেকে প্রচুর পরিমান চিংড়ির আমদানি ঘটিয়ে থাকেন। পাশের চাষী বাজারেও চিত্র একই রকম। এসব বাজারের কতিপয় ব্যবসায়ী ওজন বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুটতে চিংড়ির খোলসে বিষাক্ত জেলি ঢুকাচ্ছেন।
 
সিলিকন নামে পরিচিত এই জেলি। বাজার ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যে কেউ ক্রয় করতে পারেন। আবার অনেকেই স্থানীয়ভাবে এই জেলি তৈরি করছেন। পরে ওজন বাড়াতে তা চিংড়ির খোলসে সিরিঞ্জ দিয়ে পুশ করে ঢুকাচ্ছেন দেদারছে।

এতে চিংড়ি মোটা আকার ধারণ করছে। ওজন বাড়ছে। তুলনামূলক কম দামে সেই চিংড়ি ক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ক্রেতা সাধারণ ঠকছেন। লাভবান হচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
 
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন বাংলানিউজকে জানান, বিষাক্ত জেলি যুক্ত চিংড়ি খেলে প্রথমে তা মানুষের পেটে প্রবেশ করে। এরপর রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সারা মানবদেহে।
 
এটা এক ধরনের বিষ। যা আস্তে আস্তে ক্রিয়া করে। মানবদেহে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি ঘটায় বিষাক্ত এই জেলি। এর প্রভাবে মানুষের ক্যান্সার হতে পারে। সময়ের ব্যবধানে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। হৃদযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে।  
 
জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বের আলম জানান, ব্যবসার আড়ালে অসাধু কারবার করার কোন সুযোগ নেই। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।