বর্তমানে হরেক রকম কোম্পানির নানান ইলেকট্রনিক পণ্য বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এদের বেশির ভাগই দেশি কোম্পানি বলে প্রচার চালাচ্ছে।
‘সম্পূর্ণ দেশীয়’ আর দামে কম বলে বাহারি প্রচারের সুবাদে এসব পণ্যের চাহিদাও বেশ। মূলত ওয়ারেন্টি, হোম সার্ভিস, হোম ডেলিভারি, মূল্যছাড়, কিস্তিতে কেনার সুযোগ, টানা চার/পাঁচ বছর বিক্রয়োত্তর ফ্রি সার্ভিস ইত্যাদি অফারেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। তবে বেশিভাগই কোম্পানির পণ্য কিনে রীতিমত বেকুব বনে যাচ্ছেন তারা। এগুলোর বেশিরভাগই নিম্নমানের।
মোবাইলের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে আছে আছে, ছবি ভাল না ওঠা, সেট স্লো হয়ে যাওয়া, প্রচণ্ড গরম হয়ে যাওয়া কিংবা চার্জ দেবার সময় বিস্ফোরণ ইত্যাদি। সমস্যা সমাধানে ওয়ারেন্টি কার্ড নিয়ে সারাতে গেলে সময় নেওয়া হয় বেশি। এখানেও দেওয়া হয় না যথাযথ প্রতিশ্রুত সেবা।
ফ্রিজের ক্ষেত্রে সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে বেশি ঠাণ্ডা-কম ঠাণ্ডা, দরজা চুঁইয়ে পানি পড়া, বাইরের দিক বেশি গরম হয়ে যাওয়া বা বেশি বেশি শব্দ ইত্যাদি।
দেশি ও ভালোমানের বলে প্রচারিত এসব পণ্য আদতে দেশি নয়। এগুলোর সবই চীনে তৈরি। কিছু কিছু কোম্পানি তাদের কিছু পণ্য দেশে অ্যাসেমব্লল করছে মাত্র।
তবে একই সমস্যা বিদেশি নামি-দামি ব্র্যাণ্ডের পণ্যের ক্ষেত্রেও হচ্ছে। এক্ষেত্রে উৎপাদন ত্রুটি বা অন্য কোনো সমস্যাও দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু বেশিরভাগ ক্রেতাই জানেন না, ভেজাল বা ত্রুটিপূর্ণ পণ্য দিয়ে তাদের প্রতিকারের জন্য আছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সেখানে প্রমাণসহ অভিযোগ দিলেই একদম বিনা খরচে প্রতিকার পাওয়া যায়। অধিদফতর অভিযোগ আমলে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পণ্যের ত্রুটি প্রমাণ কিংবা প্রতারণার প্রমাণ পেলেই জরিমানা করে থাকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে। জরিমানার অর্থ ক্রেতার হাতে তাৎক্ষণিকভাবেই পরিশোধ করতে হয়। এরই মধ্যে এমন বেশকিছু খবর গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ওয়ারেন্টি থাক বা না থাক পণ্য কিনে প্রতারিত হয়েছে মনে করলে যে কোনো ক্রেতাই অভিযোগ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে, একবার সার্ভিসিং করে নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আবার সমস্যা দেখা দেয়। এই অবস্থায় ভোক্তা যদি মনে করেন, তাকে ত্রুটিপূর্ণ পণ্য দিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে, অথবা সার্ভিস করতে বেশি সময় নিয়ে যথাযথ সেবা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি দিচ্ছে না, তাহলে তিনি অভিযোগ করতে পারেন।
অভিযোগ দাখিল করতে কোনো ব্যয় হয় না। ভূক্তভোগীকে শুধু প্রয়োজনীয় কাগজসহ (ক্রয়ের রশিদসহ অন্যান্য) অভিযোগ দিলেই হবে। আর শুনানিতে একদিন সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে পণ্যের পাঁচগুণ পর্যন্ত জরিমানা করে তা ভোক্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করে দেওয়া হয়।
জেলা শহরের ভোক্তাকে অভিযোগ দেওয়ার জন্য ঢাকায় আসারও দরকার নেই। জেলাতে ভোক্তার অদিফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ দিলেও চলবে।
এছাড়া সারা দেশের ক্যাবের যে কোনো শাখাতেও অভিযোগ দেওয়া যাবে। ক্যাবই সকল কাগজ প্রসেস করে অভিযোগ দাখিল করবে। প্রয়োজনে আইনজীবীও নিয়োগ দেবে। এরপর প্রতারক কোম্পানি যদি জরিমানা না দেয় বা সাড়া না দেয়, তবে তার বিরুদ্ধে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরই মামলা করবে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করলে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধানও রয়েছে।
আবার প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করলে এক বছর পর্যন্ত কারদণ্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধানও রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
ইইউডি/জেএম