ভাড়া নিয়ে চালকদের নৈরাজ্য এমন চরমে পৌঁছেছে যে, অনেক সময় যাত্রীদের হেনস্থা পর্যন্ত হতে হচ্ছে।
ঢাকা শহরে ১৫০ টাকার নীচে কোনো সিএনজি অটোচালক যাত্রী তোলেন না।
বুধবার (১০ মে) বৌদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় গণপরিবহন কম। এ সুযোগে সিএনজি অটো ও ট্যাক্সিতে যাতায়াত করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।
মোহম্মদপুরে চাঁদ মিয়া হাউজিং-এর বাসিন্দা সাইফুর রহমান একজন শিক্ষক। তিনি তার কয়েকজন ছাত্রীকে নিয়ে গাবতলীর টেকনিক্যাল মোড়ে যেতে চান। শিয়া মসজিদ থেকে আজ সেদিকে বাস চলছে না। মাত্র তিন কিলোমিটার দূরত্ব হবে। ঢাকা মেট্রো-থ ১৩-২২৫৫ নম্বরে একজন সিএনজিচালক ভাড়া চাইলেন দুশ টাকা। শেষে দেড়শ টাকায় রফা হলো।
সাইফুর রহমান সখেদে বলছিলেন: এটা ঠিক নয়। বড় জোর ৬০ টাকা হবে। আমরা জিম্মি। মিটারে চলা উচিৎ কিন্তু কে শোনে কার কথা!
গাবতলী থেকে আব্দুর রহমান নামের এক যাত্রী নামলেন কলাবাগানে। উত্তর বঙ্গের এক শহর থেকে প্রায় চারশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন মাত্র ৫শ টাকায়। কিন্তু ঢাকায় পা রেখে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্ব পেরোবার জন্য ঢাকা মেট্রো-খ ১৩-৩৪৭৮-নম্বরের সিএনজি অটোর চালককে দিতে হলো আড়াইশ টাকা।
আব্দুর রহমান কণ্ঠে বিরক্তি আর অসহায়ত্ব নিয়ে বললেন, রাজধানীতে এসে বাধ্য হয়ে এতো টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। দেখার কেউ তো নেই!
শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন আমেনা খাতুন। সঙ্গে অসুস্থ বাবা। যাবেন উত্তরা। মিটারে যাবে বল ঢাকা মেট্রো-থ ১২৯৬৪৯ নম্বরের সিএনজি চালক রাজী। কিন্তু বাড়তি ৩০ টাকা দিতে হবে বলে আবদার জুড়ে দিলেন। বাধ্য হয়ে আমেনাকে তা মেনেই যেতে হল।
রামপুরার বাসিন্দা মো. মাসুদ বললেন, মিটারের কথা জিজ্ঞেস করলেই বেশিরভাগ চালক বলেন ‘মিটার নষ্ট’।
নতুন নির্ধারিত ভাড়া উঠলেই ২৫ টাকার বদলে ৪০ টাকা। জমা ৬০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা করা হয়েছে। প্রথম দুই কিলোমিটারের পর প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৭ টাকা ৬৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া, বিরতিকালের জন্য ভাড়ার হার প্রতি মিনিটে ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ২ টাকা। রাজধানীতে ১৩ হাজার সিএনজি অটো আছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ৬ হাজার অটোরিকশাতে নতুন মিটার সংযোজন করা হয়েছে। সিএনজি চালকদের দাবি, মালিকদের জমা অঙ্ক ও গ্যাসের দাম বেড়েছে তাই বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে।
এক সিএনজিচালক বলেন, ভাড়া বাড়ালে মালিক চায় বেশি টাকা। গ্যাসের দাম বেড়েছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক চালক বললেন, পুলিশকে প্রায় দিনই দুশ টাকা দিতে হয়। তার পরও আছে যখন তখন পুলিশের কেস ঠুকে দেওয়া। আছে যানজোট। এতো টাকা ইনকাম করলে তো আর সিএনজি চালাতাম না।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
কেজেড/জেএম