ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতি ওয়ার্ড-পরিবারে ওএমএস-ভিজিএফ চান চেয়ারম্যান সোহাগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৫ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
প্রতি ওয়ার্ড-পরিবারে ওএমএস-ভিজিএফ চান চেয়ারম্যান সোহাগ প্রতি ওয়ার্ডে ওএমএস, পরিবার প্রতি ভিজিএফ চান চেয়ারম্যান সোহাগ-ছবি: বাংলানিউজ

কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল থেকে: ইটনা উপজেলা খাদ্য গুদামের সামনে বেশ ভীড়। রিলিফের মাল দেয়া হচ্ছে গুদাম চত্বরে। আধুনিক ওজন মেশিন দিয়ে মেপে মেপে কার্ডধারী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করছেন ইটনা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহাগ মিয়া। সরকারি ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে এই ইউপি চেয়ারম্যানরা।

বছর বত্রিশের সোহাগ মিয়া জেলার সবকনিষ্ঠ নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান। বাবা নুরু মিয়া ছিলেন ইউনিয়নের টানা চারবার নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান।

পিতার মৃত্যুর পর শূন্য আসনে উপনির্বাচনে জয়লাভ করেন বড়পুত্র সোহাগ মিয়া।

গুদাম চত্বরে দুঃস্থদের মাঝে চাল মেপে দিয়ে নামের তালিকায় প্রাপ্তি স্বীকারের টিপসই নিচ্ছিলেন তিনি।

তার কাছে জানা গেল ইউনিয়নের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। তার ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সবাই। এর মাঝেও সরকারিভাবে যতটুকু সাহায্য দেয়া হচ্ছে তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে, দাবি সোহাগ মিয়ার। প্রতি ওয়ার্ডে ওএমএস, পরিবার প্রতি ভিজিএফ চান চেয়ারম্যান সোহাগ-ছবি: বাংলানিউজএই ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১০ হাজার পরিবার। এর মধ্যে ১৯০০টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ভিজিএফ কার্ড এর অধীনে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

অথচ ১০ হাজার পরিবারের প্রায় সমান ক্ষতিগ্রস্ত। চেয়ারম্যান সোহাগ জানালেন কৃষক পরিবারগুলোর মধ্যে প্রায় কেউই এবার হাওর থেকে এক মুঠ ধানও ঘরে নিতে পারেনি। এমনকি তার পরিবারও হাওর থেকে কোনো ধান পায়নি। ধনী-মধ্যম- ক্ষুদ্র কোনো কৃষকের ঘরেই কোনো ধান নেই।

১০০ দিনের সরকারি সহায়তা হিসেবে ভিজিএফ কার্ডপ্রাপ্তরা প্রত্যেকে মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫শ’ টাকা পাবে। এর মধ্যে প্রথম মাসে কৃষকরা পেয়েছেন ৩৮ কেজি চাল। জানা গেছে, এবার হাওরাঞ্চলে এই বরাদ্দ দেয়া হবে ১২ মাস। আগামী মৌসুমের ধান না ওঠা পর্যন্ত এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

পাশাপাশি ইউনিয়নে ডিলারদের (ওএমএস) মাধ্যমে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। ইটনা উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নে একজন করে ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে সদর ইউনিয়নে বরাদ্দ করা হয়েছে দুইজনকে।

প্রত্যেক ডিলার উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে প্রতিদিনের জন্য ১ হাজার কেজি করে চাল উত্তোলন করতে পারেন। ১৫ টাকা কেজি দরে প্রত্যেক ক্রেতা সর্বোচ্চ ৫ কেজি চাল কিনতে পারেন।

তবে চাহিদার তুলনায় এই ওএমএস এর চাল সরবরাহ পর্যাপ্ত নয় বলে জানালেন চেয়ারম্যান সোহাগ মিয়া। প্রায় প্রতিদিনই ওএমএস এর চাল কিনতে সকাল থেকে ডিলারদের দোকানের সামনে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। সারা দিন দাঁড়িয়ে থেকে খালি হাতে ফিরছেন ক্রেতারা।

চেয়ারম্যান সোহাগ সরকারের প্রতি বরাদ্দ আরও বাড়িয়ে দেয়ার দাবি জানালেন। সরকার যদি সাহায্য না বাড়ায় তাহলে হাওরবাসীর বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে বলে জানালেন তিনি। প্রতি ওয়ার্ডে ওএমএস, পরিবার প্রতি ভিজিএফ চান চেয়ারম্যান সোহাগ-ছবি: বাংলানিউজএমনকি তার জন্যও ইউনিয়নে থাকতে পারা কঠিন হয়ে পড়বে। ইউনিয়নের প্রায় সবাই তাকে চেনেন। সবাই তার কাছে সাহায্য প্রত্যাশী। সেক্ষেত্রে সবার চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল থাকায় সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারছেন না তিনি। অথচ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত সবার চাহিদা আছে। এজন্য সরকারের প্রতি অন্তত পরিবার প্রতি একটি ভিজিএফ কার্ডের বরাদ্দ চান সোহাগ মিয়া।

জানালেন, মাসে যদি একটি পরিবার অন্তত ৩০ কেজি চাল পায়, সেক্ষেত্রে অন্তত ভাত খেয়ে থাকতে পারবে পরিবারগুলো। হাওরে আর কোনো বিকল্প কর্মসংস্থান কিংবা বিকল্প ফসলের আবাদ না থাকায় এই চালই হবে তাদের লাইফলাইন। এর পাশাপাশি প্রত্যেক ওয়ার্ডে একজন করে ওএমএস ডিলার চাইলেন চেয়ারম্যান সোহাগ।

তার মতে এই মুহূর্তে বেশিরভাগ লোকই ভিজিএফ এর আওতার বাইরে। এই সব লোকদেরও চাল দরকার। কিন্তু ওএমএস চাল বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ইউনিয়ন প্রতি দৈনিক মাত্র ১ টন। অর্থাৎ ইউনিয়ন প্রতি দিনে সর্বোচ্চ দুইশ পরিবার ৫ কেজি করে চাল পাবে। ফলে ভিজিএফ এবং ওএমএস মিলেও সরকারি খাদ্য সহায়তার জালের বাইরে থাকবে অর্ধেকরও বেশি মানুষ।

এক্ষেত্রে যদি ওয়ার্ড প্রতি অন্তত একজন ডিলার নিয়োগ দেয়া হতো, সেক্ষেত্রে ইউনিয়নের প্রায় সব লোকের অন্তত ভাতের বিষয়টি নিশ্চিত হতো। এছাড়া হাওরে বেশিরভাগ পরিবারের আকার বেশি। অজ্ঞতা কিংবা পরিবার পরিকল্পনায় অনীহা থাকায় জন্ম নিয়ন্ত্রণের চলও খুব একটা নেই। সেক্ষেত্রে মাত্র ৫ কেজি চালে একটি ৮-৯ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারগুলোর অন্নের সংস্থান কয়দিন হবে? প্রশ্ন রাখেন সোহাগ মিয়া।

সামনে আরও কঠিন দিন আসছে উল্লেখ করে, ভিজিএফ কার্ড ও ওএমএস ডিলারের সংখ্যা বৃদ্ধিই এই মুহূর্তে হাওরবাসীকে অনাহার থেকে বাঁচানোর উপায় বলে জানালেন চেয়ারম্যান সোহাগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭

হাওরের জলে অপরূপ সূর্যাস্ত

নাড়ি ছেঁড়া ধনে টান কৃষকের

হাওর ডোবার দায় নিলেন না কিশোরগঞ্জের পাউবো কর্তারা

সরকার হাওরবাসীকে খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখবে

অকাল ঢলে ভাটির দেশে ‘অশনি সঙ্কেত’ এর পদধ্বনি

 হাওরের বুকে ‘কালবৈশাখী’ দর্শন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।