ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সংসদের মূল নকশা

আনতেই ৩ বছর, বাস্তবায়নে কত?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৯ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
আনতেই ৩ বছর, বাস্তবায়নে কত?

ঢাকা: বহু কাঠখড় পুড়িয়ে তিন বছর পর স্থপতি লুই আই কান-এর  করা সংসদের মূল নকশা হাতে পায় সংসদ সচিবালয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিয়ে আসার সাত মাস পরও তা এখনও বাক্সবন্দি হয়েই আছে।

সংসদ ভবনের মূল স্থাপত্য নকশা সংগ্রহের প্রয়োজনের বিষয়টি অনুধাবন করে সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মূল নকশা সংগ্রহের নির্দেশ দেন সংসদ সচিবালয়কে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর একনেক বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী মূল নকশা আনার তাগিদ দেন।

কেননা মূল নকশা হাতে না থাকায় সচিবালয় সেগুনবাগিচা থেকে আগারগাঁওয়ে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছিল না।  

প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশের পর একটি প্রতিনিধি দল কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র সফর করে। অবশেষে ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আনা হয় মূল নকশ‍া। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্দেশে নকশা বাছাই করে একটি সেট করা হয়। তবে নকশার সেট করার মধ্যেই এ বিষয়ক কাজ সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। কাজ আর এগোয়নি।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, ২১ মে সংসদ সচিবালয়ের কমিশন বৈঠকে নকশার বিষয়টি উত্থাপিত হতে পারে। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অংশ নেবেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নকশার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। কমিশন বৈঠকেই সংসদ সচিবালয়ের বাজেট নির্ধারণ ও অনুমোদন হয়।

নকশা সংগ্রহ বিষয়ক দলের প্রধান সংসদের অতিরিক্ত সচিব  আ. ই. ম গোলাম কিবরিয়া বাংলা‌নিউজকে বলেন, আনার পর একটি সেট করে র‍াখা হয়েছে। স্পিকার নির্দেশনা দিলেই সেটার বাস্তবায়ন করা হবে।

স্থ‍াপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেন, নকশা দেশে আনার পর আর কোনো নির্দেশনা আসেনি, আদেশও আসেনি। যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থাতেই আছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষিত ৮ হাজার নকশার মধ্যে ৮৩৫টি সরাসরি সংসদ সচিবালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসব নকশা চার সেট করে আনা হয়। এছাড়া আরো ৫৬টি  ডকুমেন্ট আনা হয়। লুই আই কানের প্রতি নকশার জন্য খরচ  পড়েছে ১৯ ডলার।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে লুই আই কান যখন মূল নকশাটি করেন, তখন ২৭টি মন্ত্রণালয়ের জন্য এ পরিকল্পনা কর‍া হয়। নকশায় মসজিদ, মাঝে বাগান, চন্দ্রিমা উদ্যানে একটি বড় সড়ক, এর সামনে লেক, এরপর সংসদ ভবন ছিল। তাই অনুলিপি ধরে নয়, ১৯৭৪ সালের মূল নকশা ধরে সচিবালয়সহ সব কিছু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭৪ সালে শেরেবাংলা নগরে ৪২ একর জমির ওপর সচিবালয় নির্মাণের জন্য সরকার ও মার্কিন কোম্পানি ডেভিড উইসডম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে চুক্তি হয়। পরে এর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওই এলাকায় এরই মধ্যে ১০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। জমি কমে যাওয়া এবং বর্তমানের চাহিদা বিবেচনায় লুই আই কানের নকশায় স্থাপত্য অধিদফতর কিছুটা সংশোধন এনেছে।

নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে জিয়াউর রহমান ও এইচএম এরশাদ সংসদ ভবন এলাকার ভেতরেই গড়ে তোলেন মাজার ও কবরস্থান। এর মধ্যে সংসদ ভবনের উত্তরে ৭৪ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত চন্দ্রিমা উদ্যানের মধ্যে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয় জিয়ার মাজার কমপ্লেক্স। আর জিয়া ও এরশাদের শাসনামল মিলিয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্ত লাগোয়া স্থানে পাঁচ বিঘার বেশি জায়গা জুড়ে ‘জাতীয় কবরস্থান’ নাম দিয়ে আরো অন্তত সাতজনকে সমাধিস্থ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূল নকশার প্রথম ধাপ ছিল ২০৮ একর জায়গার ওপর জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণ। যার সামনে ও পেছনেও বিস্তীর্ণ সবুজ খোলা মাঠ থাকবে। চারদিকে আট লেনের সড়ক, মাঝখানেও লেক। দ্বিতীয় ধাপে লেকের পর বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। এছাড়া বাকি জায়গায় গড়ে তোলা হবে সচিবালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাসপাতালসহ প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক বলয়।

১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দীর্ঘ সাধনার পর ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২৫ ঘণ্টা, মে ১২,২০১৭
এসএম/আরআর/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।