ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

২ বছর ধরে তালাবদ্ধ নাঈম আশরাফের গ্রামের বাড়ি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৫ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
২ বছর ধরে তালাবদ্ধ নাঈম আশরাফের গ্রামের বাড়ি নাঈম আশরাফের গ্রামের বাড়ি। ছবি: স্বপন

সিরজগঞ্জ: ঢাকার বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত হাসান মোহাম্মদ হালিম ওরফে নাঈম আশরাফের গ্রামের বাড়ি গত দুই বছর ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে। একাধিকবার অভিযান চালিয়েও ওই বাড়িতে কাউকে পায়নি পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে কাজিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমিত কুমার কুন্ডু বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, বনানীতে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত নাঈম আশরাফের ছবির সঙ্গে কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামের হাসান মোহাম্মদ হালিম নামে এক যুবকের হুবহু মিল পাওয়া গেছে।

সে ওই গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে। ধারণা করা হচ্ছে, নাঈম আশরাফ ও হাসান মোহাম্মদ হালিম একই ব্যক্তি।

তার গ্রামের বাড়িতে একাধিকবার পুলিশি অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ওই বাড়িটি গত দুই বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় হালিম ও তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি বলেও জানান ওসি। নাঈম আশরাফের রাজনৈতিক প্রতারণা

গান্ধাইল ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলাউদ্দিন জোয়ার্দ্দার বাংলানিউজকে বলেন, হালিমের বাবা আমজাদ হোসেন গ্রামে গ্রামে চুরি, মালা, চুলের ব্যান্ড ও ফিতা ফেরি করে বিক্রি করতো। আর হালিম ২০০৪ সালে এসএসসি পাস করে বগুড়া পলিটেকনিকে ভর্তি হয়। সেখানে পরিচয় গোপন করে এক মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করে বিয়ে করে। ধরা পরার পর গণপিটুনি খেয়ে পালিয়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে চাকরি নেয় এক মিডিয়া হাউজে।

তিনি বলেন, নিজের নাম পরিবর্তন করে গান্ধাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল আলমের ছেলে নাঈম আশরাফ নামে পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে। প্রায় দুই বছর আগে বাবা-মাকেও ঢাকায় নিয়ে যায় সে। তারপর থেকে তারা কেউই গ্রামে ফিরে আসেনি।

প্রায় একবছর আগে হালিমের খোঁজ-খবর নিতে পুলিশ দু’দফায় গান্ধাইল গ্রামে আসে। এ সময় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল বলেও জানান ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন।

গান্ধাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, নাম-পরিচয় গোপন রেখে এ ধরণের প্রতারণা সে আগেও একাধিকবার করে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় সে আমার ও আমার ছেলের পরিচয় ব্যবহার করেছে। এ বিষয়ে তার চাচা মোয়জ্জেম হোসেনের কাছে বিচার চেয়েছি এবং সাত দিনের মধ্যে ধরে আনার জন্য বলেছিলাম। নাঈম আশরাফের প্রতারণা

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতারণার মাধ্যমে হালিম মোট তিনটি বিয়ে করেছিল। দু’জন স্ত্রী তার প্রকৃত পরিচয় জেনে সরে গেলেও এখন তৃতীয় স্ত্রী নিয়ে বসবাস করছে ঢাকায়। সে দীর্ঘদিন ধরেই কাজিপুরের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আশরাফুল আলমের সন্তান পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে গড়ে তুলতো শারীরিক সম্পর্ক।

এদিকে দুই বছর এলাকায় না থাকলেও হঠাৎ করেই নিজেকে কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পরিচয় দিয়ে এলাকায় ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়েছে হালিম। ফেস্টুন ব্যানারে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার ছেলে তানভীর শাকিল জয়ের ছবিও ব্যবহার করেছে সে।

এ বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ আল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ধর্ষক হালিম কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পরিচয় দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন টানিয়েও প্রতারণা করেছে। দলের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে আব্দুল হালিম নামে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পদে একজন রয়েছেন। তিনি উদগাড়ি কারিগরি কলেজের প্রভাষক।

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ বাংলানিউজকে বলেন, ধর্ষক হাসান মোহাম্মদ হালিম ওরফে নাঈম আশরাফকে গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সিরাজগঞ্জের কোথাও থাকলে তাকে অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৬ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৭
জিপি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।