ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

উপেক্ষিত পাটের মোড়ক, সোমবার অভিযানে নামছে সরকার

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৭
উপেক্ষিত পাটের মোড়ক, সোমবার অভিযানে নামছে সরকার উপেক্ষিত পাটের মোড়ক- ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর কারওয়ানবাজারের সেকেন্দার স্টোর ও সোনালী ট্রেডার্সে চিনি, ডাল, ছোলা ও আটা-ময়দা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের সাদা বস্তা ও নাইলনের নেটে। সরকার এসব পণ্য বিক্রিতে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলেও এ দুই দোকানে তা উপেক্ষিত।

সেকেন্দার স্টোরের মালিক রিপন বাংলানিউজকে বলেন, ‘পাটের মোড়কে কোনো পণ্য আমাদের কাছে আসে না। কোম্পানিগুলো পাটের মোড়ক দিলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।

তারা যেভাবে চিনি, ডাল, ছোলা ও ডাল দেয়, আমরা সেভাবেই তো বিক্রি করবো’।

২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর ৬টি ও গত ১৮ জানুয়ারি ১১টিসহ মোট ১৭টি পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনে মোড়ক হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের নির্দেশ দেয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। পণ্যগুলো হচ্ছে- ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, আলু, আটা, ময়দা, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া এবং তুষ-খুদ-কুড়া।

পশ্চিম আগারগাঁও কাঁচাবাজারে আদা, রসুন, ডাল, আলু, আটা, ময়দা, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া এবং তুষ-খুদ-কুড়ার মোড়ক হিসেবে প্লাস্টিকের সাদা বস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। রসুন ও পেঁয়াজ দেওয়া হচ্ছে প্লাস্টিকের নেট।
 
এদিকে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, দফতর, অধিদফতর, কর্পোরেশন, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় আগামী সোমবার (১৫ মে) থেকে সারাদেশে বিশেষ অভিযানে নামছে সরকার। পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড ও অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
উপেক্ষিত পাটের মোড়ক- ছবি: বাংলানিউজ
তবে সরকারি আদেশ একমাত্র মেনে চলছেন চাল ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাটজাত মোড়কেই বিক্রি হচ্ছে চাল।  

কারওয়ানবাজারের বগুড়া রাইস এজেন্সির মালিক বাহার মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত এক বছর ধরে আমরা পাটের বস্তায় চাল বিক্রি করছি। সরকার প্লাস্টিকের সাদা বস্তা তুলে দিয়েছে। কয়েকবার অভিযানও চালানো হয়েছে। আসলে পাট ও প্লাস্টিকের বস্তার বিষয়টি কোম্পানিগুলোর বিষয়’।
 
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারি আইন মেনে পাটজাত মোড়কে ১৭টি পণ্য বিক্রি করতে হবে। এ আইন অমান্য করলেই আইনানুগ ব্যবস্থা। ১৫ মে থেকে আমরা সারাদেশে মাঠে নামছি। তবে পাটজাত মোড়ক ব্যবহারে অভ্যস্ত করা মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে সম্ভব নয়। দেশের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে’।
 
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের পাটজাত মোড়ক ব্যবহার করলে হয়তো ৫ টাকা কম লাভ হতে পারে। তবে পরিবেশ রক্ষা ও সোনালি আঁশের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার করতে হবে। এতে কৃষকরাও বাঁচবেন। ১৬ কোটি মানুষ এক হলে দ্রুতই আমরা পাটের ঐতিহ্য ফিরে পাবো’।
 
মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারেও মেঘনা ও সিটি গ্রুপ সরকারি আদেশ অমান্য করে প্লাস্টিকের সাদা বস্তা ও পলিথিনের প্যাকেটে চিনি ও ময়দা বিক্রি করছে।
 
সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টে রিট করেছি। পণ্যে পাটজাত মোড়ক ব্যবহারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই আমরা এ মোড়ক ব্যবহার করছি না’।
 
গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘সিটি গ্রুপের হাইকোর্টে রিটের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ব্যবসায়িক স্বার্থে অনেকে রিট করতে পারেন। হয়তো তিন মাস সময় পেলে স্টক করা পণ্যগুলো বিক্রি করতে পারবেন। তবে সরকারও বসে থাকবে না। পাটজাত মোড়কের পক্ষে আমরাও হাইকোর্টে আমাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবো’।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।