ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

যুবলীগের পদ পেয়ে বেপরোয়া রূপগঞ্জের সন্ত্রাসী বাদল-মোশা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৭
যুবলীগের পদ পেয়ে বেপরোয়া রূপগঞ্জের সন্ত্রাসী বাদল-মোশা

রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ: যুবলীগের পদ পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সফিকুর রহমান বাদল ও মোশারেফ হোসেন মোশা।

২১ মামলার আসামি সফিকুর রহমান বাদল এখন কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। বাদল একবার অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে ধরাও পড়েছিলেন।

চারটি হত্যা মামলাসহ ৩৩ মামলার আসামি মোশারেফ হোসেন মোশা হয়েছেন কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। যুবলীগের পদ পেয়ে তারা কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ অস্ত্র মজুদ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ওই সব বহিরাগত সন্ত্রাসী কায়েতপাড়ার তালাশকুট এলাকায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে হামলা চালানোর পাঁয়তারা করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।

কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল আউয়াল জানান, শনিবার দুপুরে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের তালাশকুট এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা শমসের মিয়ার বাড়িতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান রয়েছে। এতে তিনিসহ রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিক, রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবুল বাশার টুকু, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মো. ইয়ার হোসেনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের এ বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

এ আনুষ্ঠান ভণ্ডুল করতে রূপগঞ্জের দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী বাদল ও মোশা বাহিনীর সদস্যরা বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। এতে বিয়ের বাড়ির লোকজনসহ সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।

রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, রূপগঞ্জে যুবলীগের কমিটিতে এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম রাখায় বিয়ের অনুষ্ঠান করতেও মানুষ ভয় পায়। আর এ কারণে রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন পার করছে।

কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর কারণে কায়েতপাড়ার মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠান করতেও ভয় পায়। এদের গ্রেফতার করা না হলে রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না। রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবুল বাশার টুকু বলেন, সন্ত্রাসীদের দিয়ে জনগণের ভালোবাসা পাওয়া যায় না।

কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবতুল আউয়াল বলেন, যুবলীগের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটির শীর্ষ দুই পদে দুই সন্ত্রাসীকে রাখায় কায়েতপাড়া এলাকার সাধারণ মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠান করতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাচ্ছে।

এ ব্যাপারে তারাব পৌর যুবলীগের সভাপতি আ. আউয়াল বলেন, রূপগঞ্জের ত্যাগী নেতাদের যুবলীগের কমিটি থেকে বাদ দিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের যুবলীগের কমিটিতে রাখা হয়েছে। এতে আমরা শঙ্কিত।

জানা যায়, রূপগঞ্জে শীর্ষ সন্ত্রাসী কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ইছাখালী এলাকার তিনটি হত্যাসহ ২১টি মামলার আসামি সফিকুর রহমান বাদলকে সভাপতি এবং নাওড়া এলাকার ত্রাস চারটি হত্যাসহ ৩১ মামলার আসামি মোশা বাহিনীর প্রধান মোশারেফ হোসেন মোশাকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট যুবলীগের কমিটি গঠন করায় এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে।

দেড় বছর আগে বাদলকে র‌্যাব গ্রেফতার করেছিল বিপুল অস্ত্রসহ। দুই বছর আগে র‌্যাবের মামলায় বেশ কিছুদিন জেল খেটেছেন এই শফিকুর রহমান বাদল। অন্যদিকে আট মাস ধরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেফতারের ভয়ে পলাতক থাকা মোশা বাহিনীর প্রধান মোশারেফ হোসেন মোশা কায়েতপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর রূপগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নাওড়া এলাকায় গত কয়েক বছরে জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় মোতালিব মিয়ার ছেলে ছিঁচকে চোর মোশারেফ নিরীহ মানুষের জমি দখল শুরু করেন। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন ভোল পাল্টে সে দলের কর্মী বনে যান তিনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি যুবলীগ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। অবৈধ উপায়ে মূলত জমি দখল করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান তিনি। এর পরই গঠন করেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী।

বর্তমানে ৩০০ অস্ত্রধারীর একটি বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোশা। এই বাহিনী এলাকায় চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করলেও সাধারণ মানুষের জমি দখল করাই মোশার প্রধান পেশা। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করতে এ বাহিনী কয়েক দিন পর পর ত্রাস সৃষ্টি করে। কেউ এর প্রতিবাদ করতে গেলেই হামলা, মারপিট বা হত্যার শিকার হতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক সময়ের ছিঁচকে চোর মোশা ছিনতাই-ডাকাতি করে হাত পাকিয়ে এখন সন্ত্রাসীদের গডফাদার হয়ে যুবলীগ নেতা হয়েছেন। তার নির্দেশ ছাড়া এলাকার কোথাও কোনো অপকর্ম ঘটে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫১ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।