বিশেষ করে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেসব বই থাকা উচিৎ, সেগুলো এ গণগ্রন্থাগারটিতে নেই বলে অভিযোগ পাঠকদের।
১৯৮২ সালের ০১ সেপ্টেম্বর স্থাপিত গণগ্রন্থাগারটি ২০০৮ সালের ১৪ জুন জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র মরা মধুমতির চরে নিজস্ব ভবনে যায়।
এখানে রয়েছে একটি পাঠকক্ষ, একটি কনফারেন্স রুম ও একটি অফিস কক্ষ। সপ্তাহের শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
সরেজমিনে জানা গেছে, গণগ্রন্থাগারটিতে মোট ৩০ হাজার ২৮৩টি বই রয়েছে। এর মধ্যে বাংলা বই ২৮ হাজার ৩৬৬টি, ইংরেজি বই ১ হাজার ৯১৪টি ও অন্যান্য বই রয়েছে ৩৩টি। এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে ইতিহাস, উপন্যাস, সাহিত্য, জীবনী, ভ্রমণ কাহিনী, নাটকসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন লেখকের লেখা এবং উচ্চ মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর শ্রেণি, চিকিৎসা বিজ্ঞান, আইনশাস্ত্র ও প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই। এছাড়া ১২টি দৈনিক, কয়েকটি সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক পত্রিকা রাখা হয়।
শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক পাঠক প্রতিদিন এ গণগ্রন্থাগারটিতে পাঠ্যবই ও পত্রিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ের বই পড়তে আসেন।
গোপালগঞ্জ লাল মিয়া সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ফাল্গুনী জানান, প্রায় প্রতিদিনই তিনি এখানে আসেন। পাঠ্যবই ছাড়াও তিনি দৈনিক পত্রিকা, গল্প ও উপন্যাস বই পড়েন। তবে নারীদের আলাদা পাঠকক্ষ থাকলে তার মতো আরো অনেক নারী ও শিক্ষার্থী এখানে আসতেন বলেও মনে করেন তিনি।
সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের পরীক্ষার্থী ডেভিড জানান, গ্রন্থাগারটির পরিবেশ ভালো। তিনি প্রতিদিন এখানে আসেন। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি তিনি গুণী ব্যক্তিত্বদের জীবনী পড়েন।
তিনিও বলেন, এখানে পাঠকদের চাহিদা অনুসারে পাঠ্যবই ও বিভিন্ন সমসাময়িক বই থাকলে পাঠক অনেক বাড়বে।
সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অনার্স বাংলা তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সজিব মণ্ডল বলেন, তিনি এখানে আসেন উপন্যাস ও কাব্যগ্রন্থ পড়তে। তিনি বলেন, এখানে পাঠদানের আরো ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র মো. ওসিকুর রহমান বলেন, ‘নতুন নতুন বইয়ের পাশাপাশি এখানে বেশি করে কম্পিউটারের ব্যবস্থাসহ ই-লাইব্রেরি করা গেলে পাঠক সংখ্যা বাড়বে, চাহিদাও মিটবে। এখানে বসেই আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারে চাহিদা মাফিক দেশি- বিদেশি বই পড়তে পারবো’।
নির্মাণের পর ভবনটির সংস্কার না হওয়ায় এর বিভিন্ন দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। গ্রন্থাগারটির প্রধান ফটকের সাইনবোর্ডেও মরিচা ধরেছে। ভবনের বাইরে ও ভেতরের রং নষ্ট হয়ে গেছে। ফ্যানগুলো অনেক পুরনো হওয়ায় শব্দ দূষণে পাঠকদের মনোনিবেশে সমস্যা হচ্ছে।
লাইব্রেরিয়ান নিখিল রঞ্জন বৈরাগী বলেন, ভবনটি বহুতল করে অনেক নতুন নতুন বই সংগ্রহ করা গেলে পাঠকদের চাহিদা পূরণ করা যাবে।
তিনি জানান, প্রতি বছর পত্রিকা কেনায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং আনুসঙ্গিক ব্যয় বাবদ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। তা দিয়ে এখানকার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ অন্য প্রয়োজনীয় কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
এখানে একটি লাইব্রেরিয়ানসহ ৪টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান পদটি ফাঁকা। ৩টি কম্পিউটারের মধ্যে একটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বরাদ্দের অভাবে মেরামত করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৩ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
এএসআর