ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘পুরোপুরি দখলমুক্ত গুলশানের ফুটপাত’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৩ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
‘পুরোপুরি দখলমুক্ত গুলশানের ফুটপাত’ দখলমুক্ত গুলশান ফুটপাত/ছবি: সুমন শেখ-বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়া গুলশান-বারিধারার ফুটপাতের বৃহদাংশ ছিলো কোনো না কোনো দূতাবাসের কব্জায়। কোনো দূতাবাস ৮ ফুট প্রস্থের ২শ ফুট দৈর্ঘ্য সড়কের ফুটপাতও পুরোটাই রেখেছিল দখল করে। মানুষের হাঁটার উপায় ছিলো না এসব ফুটপাতে। কিন্তু দিন বদলেছে। দূতাবাসের নিরাপত্তার পাশাপাশি জনগণের হাঁটাচলাটাও যে জরুরি তা এতোদিন পর উপলব্ধি করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। টানা অভিযানে দখলমুক্ত ফুটপাতে এখন স্বস্তির নিশ্বাস।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর সব ফুটপাত দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মেয়র আনিসুল। তার দাবি, গত ৬ মাসের প্রচেষ্টায় এখন গুলশান এলাকার প্রতিটি ফুটপাত দখলমুক্ত।



ফুটপাতগুলো একটি রাস্তায় রূপান্তরিত হয়েছে। দখলমুক্ত করার পাশাপাশি ফুটপাত এমনভাবে সংস্কার করা হয়েছে এখন যে কেউ অনায়াসে চলাচল করতে পারবে।

প্রথমে কানাডিয়ান হাইকমিশন থেকে দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করে ডিএনসিসি। এরপর পর্যায়ক্রমে পাকিস্তান হাইকমিশন, ইটালিয়ান দূতাবাস, আমেরিকান দূতাবাস, জার্মান দূতাবাস এবং সবশেষ অস্টেলিয়ান হাই কমিশনের অফিসের সামনে থেকে সব বোল্ডার ও টব সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকার প্রায় সব ফুটপাত দখলমুক্ত করা হলো। এমনটাই দাবি মেয়রের।
দখলমুক্ত গুলশান ফুটপাত/ছবি: সুমন শেখ-বাংলানিউজ
দখলমুক্ত ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলেন রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দু’মাস আগেও এই ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারতাম না। একেতো বোল্ডার, তার উপর নোংরা হয়ে থাকতো। এখন সকালে উঠে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারি। খুব ভালো হয়েছে। কেননা ঢাকা শহরে হাঁটার জায়গা নেই, ফুটপাত দখলমুক্ত থাকলে অন্তত সকালবেলায় একটু হাঁটা যায়।
বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোর পাশাপাশি কিছু প্রভাবশালীর দখলেও ছিল গুলশান-বাড়িধারার ফুটপাত। এসবই এখন দখলমুক্ত।

ডিএনসিসির অভিযানে ইটালিয়ান দূতাবাসের সামনে থেকে ৩শ, রাশিয়ান দূতাবাসের সামনে থেকে ৩শ’র বেশি, পাকিস্তান হাইকমিশন অফিসের সামনে থেকে ৫০টির মতো বোল্ডার ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিছু কিছু দূতাবাসের সামনে অবৈধভাবে পুলিশ বক্স ও ৩/৪ ফুট দৈর্ঘ্য ফুলের টব দিয়ে দখল করে রেখেছিল রাস্তা। রাশিয়ান দূতাবাসের চারপাশের রাস্তার উপরে ব্লক দিয়ে সাড়ে ১৫ কাঠা জায়গা দখল ছিলো। সেগুলোও গুঁড়িয়ে দিয়েছে ডিএনসিসি।
দখলমুক্ত গুলশান ফুটপাত/ছবি: সুমন শেখ-বাংলানিউজ
ফুটপাত দখলমুক্ত ও সংস্কার প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর উত্তরা থেকে ধানমন্ডি-২৭ পর্যন্ত ৫টি অঞ্চলের সবগুলো ফুটপাত প্রতিবন্ধীদের চলাচল উপযোগী করে নির্মাণ করার উদ্যেগ নিয়েছে ডিএনসিসি। এসব ফুটপাত এমনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে যেন একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও সহজে চলাচল করতে পারেন। ফুটপাতে বাটন টাইপের টাইলস বসানো হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ফুটপাতের মুখে জিরো স্লাব বাসানো হবে, যেন হুইল চেয়ার নিয়ে চলাচল করা যায়।

গুলশান এলাকার আরেক বাসিন্দা হাসমত আলী শুক্রবার (১২ মে) বিকেলে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, অনেক ভালো কাজ হয়েছে। এখন আমরা খুব সহজেই ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারি। আগে দূতাবাসের সামনে দিয়ে হাঁটতে দিতো না। এখন আর সমস্যা নেই। তাছাড়া ফুটপাতগুলো যেমন চওড়া, তেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়েছে। আগে হাঁটতে গেলে একজনের সঙ্গে অন্যজনের ধাক্কা লাগতো। এখন আর সমস্যা হয় না।

ফুটপাত দখলমুক্ত দাবি করে মেয়র আনিসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মোটামুটিভাবে গুলশান এলাকার সব ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পেরেছি। এটা নগরবাসীর জন্য বড় অর্জন। দীর্ঘ ২৫ বছরেও যেটি সম্ভব হয়নি আমরা সেটি করেছি। আমাদের নাগরিকরা এখন মুক্তভাবে হাঁটতে পারবেন। কাউকে ছাড় দেইনি। দখলমুক্ত করতে এসে ১১ জন প্রভাবশালী লোকও পেয়েছি। তাদেরও বুঝিয়ে ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত করেছি। এখন এক ইঞ্চি জায়গাও কারও দখলে নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
এসএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।