শনিবার (১৩ মে) বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহগুলো দাফনের জন্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিফজুর আলম মুন্সি বাংলানিউজকে বলেন, নিহতদের পরিবারের কাছে মরদেহগুলো নেওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো।
যে কারণে ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার সকালে বেওয়ারিশ হিসেবে মরদেহগুলো দাফনের জন্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তাহন্তর করা হয়। তারা দুপুরের মধ্যে দাফন কাজ শেষ করবেন। সহযোগিতায় থাকবে পুলিশ।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি হিফজুর আলম মুন্সি বলেন, নিহত সাজ্জাদের মেয়ে সুমাইয়া খাতুনকে পুলিশ হেফাজতে এখনও বিভন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে এই ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হবে। মামলার পর তার বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হবে বলেও জানান পুলিশর এই কর্মককর্তা।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রাজশাহী কার্যালয়ের অর্গানিয়ার এনায়েত কবির মিলন বাংলানিউজকে বলেন, মরদেহগুলো তারা বুঝে পেয়েছেন। এখন তাদের ব্যবস্থাপনাতেই নিহত পাঁচ জঙ্গির মরদেহ দাফন করা হবে। এরই মধ্যে মহানগরীর হেতমখাঁ গোরস্থানে তাদের জন্য কবর খননের কাজ চলছে। বাদ জোহর তাদের মরদেহ দাফন করা হবে।
এর আগে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ফরেসিক বিভাগের প্রধান ডা. এনামুল হক বাংলানিউজকে জানান, আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণেই গোদাগাড়ীর বেনীপুরে গ্রামের ওই পাঁচ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে সাজ্জাদ ও আশরাফুলের শরীরের সঙ্গে সুইসাইডাল ভেস্ট বাঁধা ছিল। বাকি তিনজনের শরীরে বোমা ও গুলির চিহ্ন ছিল বলেও জানান ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এনামুল হক।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাজ্জাদ ও আশরাফুলের শরীরের পেটের অংশে বোমার বিস্ফোরণের বড় ক্ষত ও পোড়ার চিহ্ন রয়েছে। তাই তারা বোমা বহন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর বেলী, কারিমা ও আলামিনের শরীরে গুলি ও বোমার স্প্লিন্টারের আঘাত রয়েছে বলেও জানান রামেক ফরেসিক বিভাগের প্রধান ডা. এনামুল হক।
ওসি বলেন, আটক সুমাইয়াকে নিয়ে অভিযান শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
গত ১১ মে (বৃহস্পতিবার) সকালে আত্মঘাতী বোমা শরীরে বেঁধে জঙ্গিরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা গোদাগাড়ী সাব-স্টেশনের ফায়ার সার্ভিস কর্মী আবদুল মতিনকে (৪৯) শাবল দিয়ে খুঁচিয়ে ও হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।
একই সময় আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। এর মধ্যে চারজন একই পরিবারের। জঙ্গিরা হলেন- সাজ্জাদ হোসেন (৫০) তার স্ত্রী বেলী বেগম (৪৫), ছেলে আল আমিন (১৮), মেয়ে কারিমা খাতুন (২৪)। বহিরাগত জঙ্গি আশরাফুল ইসলাম (২৪)। তবে সাজ্জাদের বড় ছেলে সোয়ায়েব ওই বাড়িতে ছিল বলে ধারণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তাকে আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
ঘটনা পর পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন সাজ্জাদের আরেক মেয়ে সুমাইয়া খাতুন। আস্তানা থেকে সুমাইয়ার ছেলে জোবায়ের (০৮) ও আতিয়া (৩ মাস) নামের দুই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। সুমাইয়ার স্বামী জঙ্গি জহুরুল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ অভিযান চালানো হয়।
প্রায় ৩৫ ঘণ্টা পর শুক্রবার দুপুরে অপারেশন ‘সান ডেভিল’ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ সময় এক ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের জানানো হয়, আস্তানা থেতে ২টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ১১টি বোমা, ১টি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগজিন, জঙ্গি মতাদর্শের কিছু বই, গান পাউডার ও পুলিশের পোশাকের রঙয়ের কিছু থান কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে।
এর মধ্যে বোমাগুলো এক জায়গায় করে বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিস্ক্রিয় করা হয়। আর নিহত জঙ্গির মধ্যে আশরাফুল ও আল আমিন শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গি। আশরাফুল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। সে আইটি বিষয়ে পারদর্শী বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩১ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
এসএস/জিপি/বিএস