নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফসল ঘরে তোলার উপযুক্ত হয়। এরইমধ্যে উজান থেকে আসতে থাকে পাহাড়ি ঢল।
এসব বলছিলেন আর বার বার নিজের কপালকে দুষলেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার চরাঞ্চলের রেজাউল করিম, মোকছেদ আলী, আমির হামজা, হোসেন আলী, বাবলু মিয়াসহ একাধিক কৃষক।
প্রত্যেক বছর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে যমুনার পেট শুকিয়ে আসে। বিশাল বুক জুড়ে জেগে ওঠে অসংখ্য চর। নদীর দু’কূলের ঢালু পাড় বেরিয়ে পড়ে। যমুনার অফুরন্ত বুক তৈরি হয় চাষের জমি হিসেবে। চরাঞ্চলের কৃষক সেই বুকে নানা ধরনের ফসল চাষে নেমে পড়েন।
চরে জেগে ওঠা এসব জমিতে কালো বোরো, ধনিয়া, কাউনসহ মসলা জাতীয় ফসল চাষ করেন তারা। স্বল্প ব্যয়ে এসব ফসল চাষ হয় যমুনার সেই পলিযুক্ত উর্বর মাটিতে। উপযুক্ত হলেই ফসল ঘরে তোলেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। বিগত বছরগুলোতে ফসল ঘরে তুলতে তেমন একটা সমস্যা হয়নি। কিন্তু এবার কৃষকের স্বপ্ন যেন পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরে তোলার আগেই সব ফসল পানিতে ডুবে গেছে।
প্রায় মাসেকখানেক আগে তলিয়ে যায় আধাপাকা কালো বোরো ধান। পরের ধাক্কায় ধনিয়া ডুবতে থাকায় আরেকদফা ক্ষতির মুখে পড়েন চরাঞ্চলের কৃষক। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই কাউনের পালা শুরু হয়।
জহুরুল ইসলাম, আয়েন উদ্দিন, জমির উদ্দিনসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, গেলো ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে চরের জমিতে কাউন চাষ করেন তারা। এখন কাউন ঘরে তোলার পালা। কিন্তু যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন নতুন কাউনের ক্ষেত তলিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আপতত কোনো উপায় সামনে দেখছেন না চরের কৃষক।
তারা আরো জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আধাপাকা কাউন কাটতে নেমেছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। যে যেভাবে পারছেন, যতটুকু হচ্ছে তাই ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। কারণ এখন না কাটলে যা আছে তাও ঘরে তোলা যাবে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের হর্টিকালচার সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, জেলার তিন উপজেলার ওপর দিয়ে যমুনা নদী বহমান। প্রত্যেক বছর শুষ্ক মৌসুমে কৃষকরা যমুনায় জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ফসল আবাদ করেন। তাতে চলে তাদের জীবন-জীবিকা। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চরাঞ্চলের কৃষকরা এবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
এমবিএইচ/জেডএস