শনিবার (১৩ মে) বিকেল ৪টার দিকে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মহানগরীর হেতেমখাঁ গোরস্থানে পাঁচ জঙ্গির মরদেহ দাফন করা হয়।
দেশবিরোধী ও ঘৃণিত কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা জঙ্গিদের মরদেহ গ্রহণ করেনি।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের অর্গানিয়ার এনায়েত কবির মিলন বাংলানিউজকে বলেন, দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহগুলো কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ। পরে সেখান থেকে মরদেহগুলো নিয়ে হেতেমখাঁ গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, বেনীপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহত পাঁচ জঙ্গির দু’জন বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে আল আমিন বোমা বহনকারী ছিলো বলে ধারণা করা হচ্ছে। শনিবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে দ্বিতীয়বারের মতো মরদেহ দেখে এমন তথ্য দেন ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক ডা. এনামুল হক। এর আগে শুক্রবার (১২ মে) রাতে তিনি বলেছিলেন, পাঁচজনই বোমা বিস্ফোরণে মারা গেছেন।
ডা. এনামুল হক বাংলানিউজকে জানান, ওই বাড়ির মালিক সাজ্জাদ হোসেন পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। তবে তার শরীরেও বোমার স্প্লিন্টার ছিল। এছাড়া তার স্ত্রী বেলি ও কারিমার শরীরেও বোমা ও গুলির চিহ্ন রয়েছে। সাজ্জাদের ছেলে আলামিন ও জঙ্গি নেতা আশরাফুল মারা গেছে বোমার আঘাতে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিফজুর আলম মুন্সি বাংলানিউজকে বলেন, নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মরদেহ গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় তাদের মরদেহ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে হস্তান্তর করা হয়। পরে তারা মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত মামলা না হলেও প্রক্রিয়া চলছে। জহুরুলের স্ত্রী ও সাজ্জাদের মেয়ে সুমাইয়া খাতুনকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) সকালে আত্মঘাতী বোমা শরীরে বেঁধে জঙ্গিরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা গোদাগাড়ী সাব-স্টেশনের ফায়ার সার্ভিস কর্মী আবদুল মতিনকে (৪৯) শাবল দিয়ে খুঁচিয়ে ও হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার হাসপাতালে নিয়ে গেলে তিনি মারা যান।
একই সময় আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। এর মধ্যে চারজন একই পরিবারের। জঙ্গিরা হলেন- সাজ্জাদ হোসেন (৫০), তার স্ত্রী বেলী বেগম (৪৫), ছেলে আল আমিন (১৮), মেয়ে কারিমা খাতুন (২৪)। বহিরাগত জঙ্গি আশরাফুল ইসলাম (২৪)। তবে সাজ্জাদের বড় ছেলে সোয়ায়েব ওই বাড়িতে ছিল বলে ধারণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তাকে আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
ঘটনার পর পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন সাজ্জাদের আরেক মেয়ে সুমাইয়া খাতুন। আস্তানা থেকে সুমাইয়ার ছেলে জোবায়ের (০৮) ও আতিয়া (৩ মাস) নামের দুই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। সুমাইয়ার স্বামী জঙ্গি জহুরুল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী এ অভিযান চালানো হয়।
প্রায় ৩৫ ঘণ্টা পর শুক্রবার দুপুরে অপারেশন ‘সান ডেভিল’ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এ সময় এক ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হয়, আস্তানা থেকে ২টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ১১টি বোমা, ১টি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগজিন, জঙ্গি মতাদর্শের কিছু বই, গান পাউডার ও পুলিশের পোশাকের রংয়ের কিছু থান কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে বোমাগুলো এক জায়গায় করে বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করা হয়।
নিহত জঙ্গির মধ্যে আশরাফুল ও আল আমিন শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গি। আশরাফুল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। সে আইটি বিষয়ে পারদর্শী।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
এসএস/জেডএস