ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

হাওরাঞ্চলে অস্তিত্ব সংকটে কোটি গবাদি পশু

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৭
হাওরাঞ্চলে অস্তিত্ব সংকটে কোটি গবাদি পশু   খাদ্য সংকটে গবাদি পশু- ছবি: অনিক খান

ঢাকা:  হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যায় শুধু কৃষকই নয়, অস্তিত্ব সংকটে কোটি গবাদি পশু। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট এ বন্যায় বোরো ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে পশু খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
 

সরকারি ত্রাণ সহায়তায় মানুষের খাদ্য সংকট মোকাবেলা করা গেলেও ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৮৩টি গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস ও মুরগির খাদ্যের যোগান দিতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন হাওরবাসী।
 
মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, হাওরের এক ফসলি জমিতে উৎপাদিত বোরো কেবল এখানকার লাখ লাখ মানুষই নয় খাবার জোগায় লাখ লাখ প্রাণী সম্পদেরও।

ধানের খড় এখানকার গরু, মহিষের প্রধান খাবার। অন্যদিকে ধান ও চালের উদ্বৃত্ত খেয়ে বেঁচে থাকে ছাগল, ভেড়া, হাঁস ও মুরগি। দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে এই প্রাণীসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে খাদ্য সংকটে হাওরে গবাদী পশুর দাম কমে গেছে। খাদ্যের অভাবে কমদামে পশু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ। বন্যায় তলিয়ে যাওয়া জমি থেকে পঁচে যাওয়া ঘাস ও খড় সংগ্রহ করে খাওয়ানোয় গবাদি পশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।   আর দিন বাড়ছে এ আক্রান্তের সংখ্যা।

 
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ধান ও মাছ হারিয়ে দিশেহারা মানুষের সম্পদ বলতে ছিলো কেবল তাদের প্রাণীসম্পদ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শেষ সম্বল বাঁচানোও তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে, গবাদী পশুর খাবার সংকট এখন মানুষের খাদ্য সংকটের চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
 
এদিকে মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বন্যা কবলিত ছয় জেলায় এরইমধ্যে বেশ কিছু হাঁস ও মহিষ মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কেবল গত ২৭ এপ্রিল পর্যন্তই সুনামগঞ্জে চারটি মহিষ ও চার হাজার হাঁস মারা গেছে।
 
পরিসংখ্যান বলছে, এই বন্যায় ছয় জেলার ৪২ উপজেলার ১০ লাখ ৯০ হাজার ১৬৬টি গরু, ২৯ হাজার ৭১০টি মহিষ, এক লাখ ৮১ হাজার ৯২৮টি ছাগল, ৮৮ হাজার ১৭২টি ভেড়া, ৫৯ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৫টি হাঁস ও ২৬ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪০টি মুরগি হুমকির মুখে পড়েছে। পানিবাহিত নানা রোগবালাই ও খাদ্যের অভাবে এসব প্রাণীসম্পদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘উপস্থিত দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছে। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি ঋণের সুদ  স্থগিত করে আরো ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা হাওর অঞ্চলের জলমহাল উন্মুক্ত রাখতে ইতোমধ্যে মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি। হাওড়বাসীকে অন্য কোনো ধরনের সহায়তার মাধ্যমে প্রাণীসম্পদ রক্ষা করার উপায়ও খোঁজা হচ্ছে।
 
অন্যদিকে ছয় জেলার ২০ উপজেলায় ৪৬টি হাওরে ঠিক কি পরিমাণ মাছের ক্ষতি হয়েছে তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত পাওয়া প্রাথমিক হিসেবে তারা বলছে ২১৩ দশমিক ৯৫ মেট্রিক টন মাছের ক্ষতি হয়েছে। তবে এর পরিমাণ আরো বাড়বে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের ২৩টি হাওরে প্রায় ৫০ মেট্রিক টন, সিলেটের আট হাওরে ২১ মেট্রিক টন, নেত্রকোনার ১৪ হাওরের প্রায় ১১৯ মেট্রিক টন ও মৌলভীবাজারের একটি হাওরে ২৫ টন মাছের ক্ষতি হয়েছে। কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হাওরের মাছের পরিসংখ্যান এখনো পাওয়া যায়নি।
 
বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট ও কুমিল্লার ছয় জেলায় অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট আগাম বন্যায় কেবল কৃষিখাতেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ছয় লাখ ২৩ হাজার ৩৭৯ জন কৃষক। বন্যা যে পরিমাণ ধান কেড়ে নিয়েছে তাতে চাল পাওয়া যেতো সাত লাখ ৪৯ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন। সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে  দুই লাখ ৪৯ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমির ফসল। ছয় জেলার ৬২ উপজেলার ৪৭টি হাওরের প্রায় সবাই এই বন্যায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৭  
আরএম/এসআরএস/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।