রোববার (১৪ মে) দুপুরে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম সিরাজুল ইসলাম জানান, শুক্রবার (১২ মে) দুপুরে পুকুরে পাওয়া ওষুধের মূল্য ১ লাখ টাকার মতো। আর শনিবার (১৩ মে) দুপুরে চতুর্থ তলার মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মজুদ থাকা অবস্থায় ২২ আইটেমের যে ওষুধ পাওয়া গেছে, তার মূল্য ১৫ লাখ টাকার বেশি।
এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ওই ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স বিলকিস বেগমকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি শনিবার দিবাগত রাত থেকে হাসপাতালের আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি বাড়ানোসহ তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) সাইফুল্লাহ মো. নাছির জানান, শুক্রবার চতুর্থ শ্রেণীর কোয়ার্টারের পুকুরে সরকারি ওষুধ ভাসতে দেখে স্থানীয়দের পাওয়া তথ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লক্ষাধিক টাকার ওষুধ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের আয়া শেফালি বেগম ও তার ছেলে মামুনকে পুলিশ গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুসারে শনিবার হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে অভিযান চালায় পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, এ অভিযানে বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ জব্দ করা হয় ইনচার্জ বিলকিস বেগমের কক্ষ থেকে। তাকে গ্রেফতার করে রোববার আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আদালতে পুলিশ বিলকিস বেগমের রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে ওষুধ চুরির ঘটনার নেপথ্যে কারা জড়িত তাদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে। পাশাপাশি পুলিশ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। এসব ওষুধের আরো মজুদ আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, শেবাচিম হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৯৫ ধরনের ও ভর্তিরত রোগীদের ৩০৮ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। অথচ মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তিরত রোগীরা বলেছেন, তারা ওষুধ চাইতে গেলে নেই বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে কিনতে হয়।
তবে হাসপাতালের স্টোর ও ওয়ার্ডের খাতায় সবকিছুই ঠিকঠাক পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ও নার্সিং তত্ত্বাবধায়ক।
পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের আশপাশের সকল ওষুধের দোকানিদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিলো। সরকারি ওষুধ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এজন্য আয়ার কাছে থাকা ওষুধ বিক্রি করতে না পেরে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার রেশ ধরে আয়ার কর্মস্থল মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে অভিযান চালানো হয়। ওয়ার্ড ইনচার্জ বিলকিস বেগম লুকানোর চেষ্টা করলেও যখন এক আইটেমের ২১ হাজার ২০০ ভায়েল ইনজেকশন পাওয়া যায় তখন বিষয়টি পরিস্কার হয়।
ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১ হাজার ১০০ পিস ওমিপ্রাজল ইনজেকশন, ৬৭০ পিস কিটোরোলাক (৬০ মি.গ্রা.), ৮৭৮ পিস কেলামক্স (১.২ গ্রাম), ২১ হাজার ২০০ পিস ডেক্সামিথাসন, ৯০০ পিস অ্যাট্রোপিন, ১০৮ পিস ১০% ডি/এ, ৯৬ পিস ২০% ডি/এ, ২ হাজার ৩১২ পিস সেফট্রিয়াক্সোন (১ গ্রাম), ৩ হাজার ১৮০ পিস সেফট্রিয়াক্সোন (২ গ্রাম), ৪০ পিস সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ২৩৯ পিস ম্যাক্সুলিন, ১০ পিস হ্যালোপিড, ৩ হাজার ১০০ পিস কটসন, ১৮০ পিস মেট্রোনিডাজল, ৭৪০ পিস হাইড্রোকরটিসন, ১০০ পিস ফ্লুক্লোক্স, ১০০ পিস ডাইক্লোফেন, ১০০ পিস রেনিটিড এবং ২৫ পিস উইনডল। এছাড়া ১১ পিস হ্যান্ড গ্লোবস্ ও সলভিন, প্রায় ৫০০ পিস নতুন বেডশিট, কটনসহ নানা ইক্যুইপমেন্টও জব্দ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৭
এমএস/এএসআর