মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা ও মমতার কাছে তুচ্ছ পৃথিবীর আর সব কিছু। একজন মা সারাজীবন তার সন্তানকে আগলে রাখেন বুকে।
প্রাণীকুলেও চিত্রটি ভিন্ন নয়। যেমনটি দেখা যায়, সিলেট শহরের চাষনী পীর (র.) মাজারে। মা-বানর তার স্নেহ দিয়ে কোলের শিশুটিকে আঁকড়ে ধরেছে।
সন্তানের জন্য মা কতটা যত্নবান? তা প্রাণীকুল থেকেও উপলব্ধি করা যায়। গায়ে উকুন রয়েছে শিশু বানরের। অতি যত্নে সন্তানের গায়ে উকুন খুঁজে হাত দিয়ে তা মারছে মা-বানরটি। কোনো মা-বানর সন্তানকে কোলে নিয়ে মানুষের সংস্পর্শে যাচ্ছে খাবারের সন্ধানে। নিজে না খেয়ে শিশু বানরের মুখে আহার তুলে দেওয়ার এ দৃশ্য মনে করিয়ে দেয়-মানবকুলে সন্তানকে বড় করতে মায়ের কী যাতনা-কী যে কষ্ট! অভাবের সংসারে নিজে অভূক্ত থেকেও সন্তানের মুখে আহার তুলে দেওয়া সেই মানুষটি মা।
দিনটি উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। মাকে যে ভালোবাসেন ভার্চুয়াল জগতে জানান দিচ্ছেন তা। সিলেটে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
সিলেটের ওসমানীনগরে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার উদ্যোগে মা দিবস পালিত হয় স্থানীয় লাল কৈলাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মা দিবসের আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ চন্দ্র মণ্ডল। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ওসমানীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৌরভ পাল মিঠুন। উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে।
বক্তব্যে বলা হয়, মাদিবসে মাকে যথাযথ সম্মান দেওয়া, তাকে শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য দিনটি প্রতিপালন করা হয়। যদিও মায়ের জন্য কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না, সন্তানের জন্য প্রতিটি দিনই মা দিবস হওয়া উচিত। পশ্চিমা বিশ্বের প্রেক্ষাপট আমাদের গিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে-- অনেকের এমন মতের বিপরীতে বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সুখি সংসার গড়ে তুলতে মাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বৃদ্ধাশ্রমে। আর এই ট্রাডিশন বিত্তশালীদের মধ্যে বেশি। তাই মায়ের সান্নিধ্যে সন্তানদের ফিরিয়ে আনতে, মায়ের অভাব অনুভব করিয়ে দিতেই প্রয়োজন মা দিবস।
এ প্রসঙ্গে সিলেটের মিডিয়াকর্মী আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, মায়ের জন্য আলাদা কোনো দিবসের প্রয়োজন হয় না। কেননা আমার সারাবছর আমার মায়ের জন্য। যারা মাকে ফেলে রেখে চলে যায়, তাদের জন্যই মা দিবস।
ক্বারী মাওলানা আব্দুল বাসিত বাংলানিউজকে বলেন, যে সন্তান মায়ের দিক একবার সুনজরে তাকালো, তার আমলনামায় মকবুল একটি হজের সওয়াব লেখা হবে। এভাবে সন্তান মায়ের চেহারার দিকে যতবার সুদৃষ্টিতে তাকাবে, ততবার আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন তাকে মকবুল হজের সওয়াব দান করবেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোকাদ্দেছ বাবুল বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মা-বাবা আমাদের সঙ্গেই একই পরিবারে বাস করেন। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে মা-বাবার খবর রাখে না সন্তানরা। তাদের জন্য একটি মা দিবস প্রয়োজন। তবে আমাদের অস্তিত্ব জুড়ে রয়েছেন মা। প্রতিটি দিন হোক মা-বাবার জন্য।
সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সনাক’ সিলেট অঞ্চলের সমন্বয়ক ফারুক মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, মা দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা আবশ্যক। কেননা, এখনও অনেক বিত্তশালী লোক আছেন মায়ের খবর নেন না। অনেকে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে চলে গেছেন প্রবাসে।
ঢাকাস্থ বৃদ্ধাশ্রমের এক মায়ের আকুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তার একটাই কথা-তিনি মারা গেলে যেনো সন্তানকে দেখিয়ে দাফন করা হয়। এভাবে আমাদের দেশে অনেক মা অবহেলিত। অন্তত এই দিবসকে কেন্দ্র করে সন্তানরা যেন মায়ের কাছে ফিরে আসেন,মায়ের খেয়াল রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৭
এনইউ/জেএম