ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

কালোটাকার প্রভাব কমাতে নির্বাচনীব্যয় মনিটরিং করবে ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৩ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৭
কালোটাকার প্রভাব কমাতে নির্বাচনীব্যয় মনিটরিং করবে ইসি

ঢাকা: নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব কোনোভাবেই কমছে না। তাই বন্ধ হচ্ছে না ভোট কেনা-বেচার সংস্কৃতি। অন্যদিকে ভোট-কারচুপিও রয়েছে অব্যাহত। এসব বন্ধ করতে এবার প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এক্ষেত্রে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের একটি সূত্র।
 
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৪৪-বি ধারার দফা ৩ অনুযায়ী, কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকার ভোটারসংখ্যা তিন লাখের বেশি হলেও তিনি ২৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় করতে পারবেন না।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের সময় আরপিও-র আলোকে নির্বাচন কমিশন এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ভোটারপ্রতি প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা নির্ধারণ করেছিল ৮ লাখ টাকা। আর নির্বাচনী এলাকার ভোটারসংখ্যা তিন লাখের বেশি হলে সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা ২৫ লাখই নির্ধারণ করা হয়েছিল।

নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীর এজেন্ট কোনো তফসিলি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে নির্বাচনী কাজে এ ব্যয় করতে পারবেন। এছাড়া প্রার্থীর কর্তৃক লিখিতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি মনোহারী দ্রব্য ক্রয়, টেলিফোন বিলসহ ছোটখাটো ব্যয় করতে পারবেন।

ইসি কর্মকর্তা ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, প্রার্থীরা ২৫ লাখ টাকার বেশিই ব্যয় করে থাকেন। আর নির্বাচনী ব্যয়ের রিটার্ন দাখিলের সময় সে ব্যয়ের হিসাব দেখানো হয় না।
 
সম্প্রতি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছে, নির্বাচনী ব্যয় ২৫ লাখ টাকা অনেক বেশি। তাই ব্যয় আরো কমানো প্রয়োজন। এছাড়া নির্বাচন নিরীক্ষণ করাটাও সমান ও জরুরি। কেননা, প্রার্থীরা নির্বাচনী ব্যয়ের প্রকৃত হিসাব ইসিতে জমা দেন না।

ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, প্রার্থীদের প্রকৃত ব্যয় অনেক বেশি। কোনো কোনো আসনে কোনো প্রার্থী কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করেন।

আর তারা যে হিসাব দেন তার যথার্থতা নিরীক্ষণ করা হয় না। ফলে আইন-নির্ধারিত অংকের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করেও পার পেয়ে যান প্রার্থীরা। তাই প্রার্থীদের প্রকৃত ব্যয় পর্যবেক্ষণে এবার একটা কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করছে ইসি।

রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে এই কমিটি প্রার্থীদের ব্যয় পর্যবেক্ষণ করবে। ব্যয় বেশি হলে কমিশন তদন্ত করে যে কোনো শান্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। এমনকি কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হলেও তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে কমিশন।

নির্বাচন পরিচালনার বিধিমালা অনুযায়ী, নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীকে তার নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসিতে দাখিল করতে হয়। কেউ হিসাব না দিলে তাকে দুই থেকে সাত বছর কারাদণ্ড দেওয়ার কথাও আইনে বলা আছে।

এ বিষয়ে ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাংলানিউজ বলেছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রার্থীর ব্যয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি মনিটরিং কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কমিশন অনুমোদন দিলে আগামী সংসদ নির্বাচন থেকেই এটি কার্যকর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ইসির সূত্রটি জানিয়েছেন, স্থানীয় নির্বাচনগুলোর মতো এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ আনা হচ্ছে। যাতে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীকে কেউ আর বাধা দিতে না পারেন।

এদিকে নির্বাচনী ফলাফল ডিজিটাল মনিটরের সাহায্যে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে প্রদর্শনের চিন্তা-ভাবনাও করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভোটার-স্লিপ দেওয়ার ব্যাপারটি বাতিল করার কথা ভাবা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৭
ইইউডি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।