ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের প্রধান নির্বাহী আবেদ মনসুর বাংলানিউজকে জানান, বিমানবন্দরে নেমে কেউ যখন এই সড়কপথ ধরে রাজধানীরে ভেতরে আসতে থাকবেন তখন বনসাইয়ের শোভা তাদের মুগ্ধ করবে। তবে দেয়াল না দিলে আশেপাশের বস্তি এলাকার ছবি এই লাবণ্যকে ম্লান করে দেবে।
ছিনতাই ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ক্ষিলক্ষেত ও উত্তরা থানা থেকেও দেয়াল তুলতে সুপারিশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আবেদ মনসুর। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন দেয়াল তুলতে আপত্তি জানিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বাংলনিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশনের আপত্তির কারণ আমরা লিখিতভাবে জানতে চেয়েছি।
সবুজ উদ্দিন আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ফোনকল করে ‘দেয়াল কেন?’ জানতেই চেয়েছেন। এজন্যই তাদেরকে আপত্তির কারণ লিখিতভাবে দিতে বলেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
সরেজমিন বিমানবন্দর-বনানী ৬ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশ এখন ঝোঁপঝাড়হীন। আলোকোজ্জ্বল করে চলছে শোভাবর্ধন। উন্নতমানের এলইডি লাইট জ্বলে ওঠে সন্ধ্যা হলেই। পুরো সড়কপথে লাগবে সিসিটিভি ক্যামেরা। দৃষ্টিনন্দন করে ওয়াকওয়ে নির্মাণও চলছে। লাগানো হয়েছে বড় আকারের শতাধিক চীনা বনসাইতরু। এক মাসের মধ্যে লাগবে আরও এক হাজারের বেশি।
সড়কের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য ফুটপাতের পাশে দেয়াল তোলাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে। অবৈধ মাদক কেনাবেচাও হয় এসব বস্তি থেকে। দেয়াল তোলার পর এসব বন্ধ হবে বলে মনে করেন তারা।
ক্ষিলক্ষেত মান্নান প্লাজা এলাকার দোকানদার রমিজ উদ্দিন জানান, ট্রেনে কাটা পড়ে মাসে বহু লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন তিনি। দেয়াল তুললে রেললাইনে মানুষের হাঁটা বন্ধ হবে। আর ছিনতাইকারীরাও সড়কে ছিনতাই করে রেললাইন পেরিয়ে বস্তিতে ঢুকে পড়তে পারবে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিমানবন্দর থেকে ক্ষিলক্ষেত পর্যন্ত একাধিক জায়গায় অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে সড়ক। বস্তিতে রাস্তা পারাপারের জন্য অবৈধ সংযোগ পথ ধরে চলছে অবাধ যাতায়াত। এসব স্থানেই চলছে দেয়াল নির্মাণের কাজ।
এর মধ্যে দুটি জায়গায় ট্রেনে কাটা পড়া ও ছিনতাইয়ের একাধিক ঘটনার পর রেল কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছে। তাতে নিজ দায়িত্বে পার হওয়ার কথা লেখা রয়েছে। এমনকি দুর্ঘটনা ঘটলে তার ক্ষতিপূরণ ‘নিজেই দিতে বাধ্য থাকবেন’ বলে আদেশ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।
ক্ষিলক্ষেতের ‘লা মেরিডিয়ান’ হোটেলের ঠিক বিপরীতে বনরূপা এলাকায় প্রবেশমুখে সাইনবোর্ডের এমন নির্দেশ অমান্য করেই অবাধে মানুষ পার হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দেয়াল না থাকায় প্রতি মাসে এখানে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
আবার ক্ষিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ড এলাকার পাশে রেললাইন ঘেঁষে একাধিক বস্তি গড়ে উঠেছে। এসব বস্তি থেকে দৌড়ে রাস্তায় আসতে গিয়ে মৃত্য ঘটছে অহরহ। এ কারণে নির্ধারিত পয়েন্ট খুলে দিয়ে দেয়াল উঠলে সড়কশোভা ও নিরাপত্তা দুটোই বাড়বে বলে মনে করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের অধীনে একাজে নিয়োজিত ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ জানায়, দেয়াল তুলে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পাশাপাশি কুড়িল এলাকায় রেললাইন পারপারে একটি ‘ফুট-ওভারব্রিজ’ তারা নির্মাণ করে দিচ্ছেন। যাতে রেলে কাটা পড়ে মৃত্যু বন্ধ হয়।
দেয়াল নির্মাণে সিটি করপোরেশন আপত্তি জানালেও জায়গাটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। তাই এতে করপোরেশনের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই বলে দাবি করেছেন সড়ক ও জনপথ ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৩ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৭
এসএ/জেএম