সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের মূল্যায়ন নিয়ে মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক সেমিনারে এমন মতামত দিয়েছেন সরকারের একজন মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একাত্তরের মহান যুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্থাপন হয়েছিল জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হ্যতার পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে ১১টি চুক্তি ও ২৪ সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কতিপয় রাজনৈতিক মহল সমালোচনা করে এ নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করেছেন।
ভারত সফর অর্থহীন, সম্পর্কে নতুন মাত্রা সংযোজন করেনি- এরকম মন্তব্যের বিষয়ে বলেন, চুক্তিগুলো দু’দেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
ইনু বলেন, এবারই সাড়ে চার বিলিয়নের সরাসরি বিনিয়োগের সমঝোতা হয়েছে। এতে দু’দেশের বিনিয়োগে নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে। এটা অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আণবিক শক্তি, মহাশূন্য সংক্রান্ত, তথ্যপ্রযুক্তি ও সাইবার অপরাধের বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী।
‘সামরিক ব্যাপারটা নিয়ে সমঝোতা হয়েছে, এটা নিয়ে হৈ চৈ করার কোনো কারণ দেখি না। ভারত-বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সামরিক যে কাজগুলো একসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে করছি যেমন, যৌথ মহড়া, যৌথ প্রশিক্ষণ, সামরিক কলেজগুলার আদান-প্রদান এবং তথ্য আদান প্রদান, দু’বছর অন্তর বসা- এগুলো ধারাবাহিকভাবে বসছি, সেটার কেবল প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। নতুন কোনো জিনিস সংযোজন করিনি। ’
তিনি বলেন, শুধু অস্ত্র কেনার ব্যাপারে একটা জায়গা এসেছে, সেখানে যে অর্ধ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে সেখানে ভারত বলেছে এটা দিয়ে অস্ত্র কেনা হবে। সেটা ভারত থকেই কিনতে হবে এমন কোনো ব্যাপার নেই। যে বিষয়ে সমঝোতা স্মারক হয়েছে তাতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর জনবলের সামরিক বাহিনীর দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়বে। এ ধরনের সমঝোতা চীন, আমেরিকা, ইটালিসহ দশটি দেশের সঙ্গে রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এতো ঠুনকো নয় যে কাচের গ্লাসের মতো টোকা লাগলে ভেঙে যায়।
তিনি বলেন, বিশ্বায়নের ধাক্কা ও ঝাপটা থেকে বাঁচতে হলে আঞ্চলিকায়নের গাঢ় বন্ধুত্বই রক্ষা করবে। পাকিস্তানির চোখে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক দেখার রাজনীতি পরিহার করে প্রতিবেশীর সঙ্গে শত্রু শত্রু খেলার বদলে বন্ধুত্বের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে।
শেখ হাসিনার ভারত সফরে দু’দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ভারত ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহয়তা দেবে। এদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার ভারত সফরে যে সমঝোতা ও চুক্তি হয়েছে সেগুলো সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ ভারতের উন্নয়ন সহযোগী এবং উন্নয়ন সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
দু’দেশের যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও তা গুরুত্বপূর্ণ। দু‘দেশ ভবিষতে ‘উইন উইন সিচ্যুয়েশন’র মধ্য দিয়ে পার করবে।
হাইকমিশনার আরও বলেন, স্থল ও সমুদ্রসীমা চুক্তির সফল বাস্তবায়ন আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করেছে এবং আমাদের সহযোগিতা শক্তি সামর্থ্য বাড়ছে। বাকি অঞ্চলের অনুসরণের জন্য একটি নমুনা সম্পর্ক নির্মাণে আমরা দারুণ অবস্থানে আছি। শুধু রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেই নয়, আমাদের সম্পর্ক হচ্ছে দু’টি দেশের জনগণের মধ্যে ‘বন্ধুত্বের’ সম্পর্ক।
শ্রিংলা এসময় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।
রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ।
সেমিনারে বিভিন্ন কূটনৈতিক এবং ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৭
এমআইএইচ/এএ