ঢাকা, শনিবার, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ০১ মার্চ ২০২৫, ০০ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

‘কখন ফিরবো ঠিক নাই’ বলে আর ফিরলেন না মতিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৭
‘কখন ফিরবো ঠিক নাই’ বলে আর ফিরলেন না মতিন আব্দুল মতিনের স্ত্রী তানজিলা-ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা

ঢাকা: “আমার জন্য নাস্তা বানাইও না, আমি খাব না। ডিউটিতে যাচ্ছি, কখন আসবো জানি না।” এই ছিলে জঙ্গি হামলায় নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী আব্দুল মতিনের শেষ কথা তার স্ত্রী তানজিলার সঙ্গে।

কখন ফিরবেন স্ত্রীকে বলতে পারেননি মতিন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মতিন আর ফিরলেন না!

মঙ্গলবার (১৬ মে) পুলিশ সদর দফতরে আব্দুল মতিনের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়।

নির্ধারিত অনুষ্ঠান শুরুর আগে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তানজিলা বলেন, ঘটনার দিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মোবাইলে তার (মতিন) সঙ্গে শেষ কথা হয়। তখন তিনি বলেন, ‘আমার জন্য নাস্তা বানাইও না, আমি খাব না। ’ সেদিন রাতে ডিউটি ছিল, সকালেই বাসায় আসার কথা ছিল।

ডিউটিতে যাচ্ছি কখন আসব ঠিক নাই বলে তিনি গেলেন, তিনি আর ফিরলেন না-কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন তানজিলা।

মতিনের স্ত্রী বলেন, আগের দিন সকাল ৭টায় অফিসে যান। দুপুরে এসে খাবার খেয়ে রাতের খাবার নিয়ে আবার অফিসে চলে যান।  

সকালে আসার কথা থাকলেও আর আসা হয়নি। সকাল সাড়ে ৬টা থেকো ৭টার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে। টিভিতে খবর দেখেই পরিবারের সবাই মতিনের আহত হওয়ার বিষয়টি প্রথম জানতে পারেন বলে জানান তানজিলা।

আব্দুল মতিনের স্ত্রী তানজিলা অনুদান নিচ্ছেন-ছবি-আনোয়ার হোসেন রানামতিনের ছেলে আব্দুল্লা আল মারুফ রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ময়শাল বাড়ি আল ইসলামি একাডেমির ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। তিনি বলেন, বাবা পড়ালেখার জন্য কখনো মারেননি। তিনি বলতেন, ভালো করে পড়, বড় হতে হবে।

মতিনের মেয়ে ময়শাল বাড়ি গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী জেসমিন চুপ করে বসে ছিলেন ভাইয়ের পাশে। তার কাছে জানতে চাইলে ‘আব্বু আর নেই’ বলে কোনো কথা বলতে পারেনি জেসমিন।

তানজিলা বলেন, এখন আমার আর কিছু চাওয়ার নাই, শুধু আমার ছেলে আর মেয়ে দুইটা যেন মানুষ হতে পারে, সরকার যেন তাদের দিকে একটু খেয়াল রাখে।

৫ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন আব্দুল মতিন। তার ছোটভাই মোস্তাকীম বলেন, আমার ভাই দেশের জন্য জীবন দিলেন। ভাইকে তো আর ফিরে পাব না, সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।

গত ১১ মে পরিকল্পনা অনুযায়ী জঙ্গি আস্তানার মাটির দেয়াল পানি দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। একপর্যায়ে জঙ্গিরা বের হয়ে আসে এবং ফায়ার সার্ভিসের লোকের ওপর হামলা চালায়। এ সময় বাকি দুজন সরে গেলেও মতিন পারেননি।

আত্মঘাতী নারী জঙ্গির উপর্যুপরি অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর সকাল পৌনে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২০১ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৭
পিএম/আরআর/এমজেএফ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।