ঢাকা, শনিবার, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ০১ মার্চ ২০২৫, ০০ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

ঘুষ লাগে না, দালালও নেই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৪ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
ঘুষ লাগে না, দালালও নেই সহকারী কমিশনার (এসি-ল্যান্ড) মনদীপ ঘরাই। ছবি: মানজারুল ইসলাম

অভয়নগর (যশোর) থেকে: অভয়নগর ভূমি অফিসে এখন অভয়ের সঙ্গেই সেবা নিতে পারছে মানুষ। মাত্র ১১৭০ টাকায় ভোগান্তি ছাড়াই করে নিতে পারছে নাম জারি। মিসকেস বোর্ডে দেখে নিতে পারছে সর্বশেষ তথ্য। রেকর্ড রুম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আরএমএস) সুবিধায় প্রয়োজনীয় তথ্য ‍পাওয়া যাচ্ছে যখন তখন।

ফুরসতহীন ব্যস্ততায় সেবা দিয়ে যাচ্ছে নতুন চালু হওয়া ভূমি হেল্প ডেস্ক, সততা পয়েন্ট, ভূমি হটলাইন। পৃথক বিশ্রাম কক্ষে বসতে পারছেন মুক্তিযোদ্ধা ও নারীরা।

স্বস্তি দিচ্ছে পরিচ্ছন্ন পাবলিক টয়লেটও।

সবচেয়ে বড় কথা, ঘুষের আখড়া তকমা কুড়ানো ভূমি অফিসে এখন সব কাজ হয়ে যাচ্ছে ঘুষ ছাড়াই। বন্ধ হয়ে গেছে দালালদের দলাদলি আর উৎপাতও।   অফিস চত্বরে যশোরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে গড়া ভাস্কর্য ‘মুক্তিযোদ্ধা অঙ্গন’ ও ‘বীরের দুয়ার’ যেনো আমূল বদলে যাওয়ার গৌরবময় সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এ অফিসেরই বারান্দায় দাঁড়ানো মহাকাল শেখপাড়া এলাকার ফরিদা বেগমের মুখে পরিতৃপ্তির সুর। ভোগান্তি ছাড়াই নিজের কাজ হয়ে যাওয়ায় বেজায় খুশি মসরহাটি গ্রামের খালেক মুন্সিও। অভয়নগর ভূমি অফিস।  ছবি: মানজারুল ইসলাম

নির্দ্বিধায় দিন বদলের সব কৃতিত্ব নতুন সহকারী কমিশনার (এসি-ল্যান্ড) মনদীপ ঘরাইকে দিয়ে দিলেন তারা। যিনি অভয়নগর ভূমি অফিসের দায়িত্ব নিয়েই স্টাফদের ডেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই অফিসে কোন দালাল থাকবে না। কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দালালদের সঙ্গে কথা বলতে দেখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবেদনের পর সেবা দিতে হবে নির্ধারিত সময়েই। কোন অফিসার বা কর্মচারী বিনা প্রয়োজনে অফিসের বাইরে যেতে পারবে না। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে নির্ধারিত ছকে লিখে দিতে হবে কারণসহ যাওয়ার ও ফেরার সময়।  

তাই বদলে গেছে অভয়নগর ভূমি অফিস। ঝামেলাহীন সেবা পাওয়ায় আস্থা বেড়েছে সাধারণ মানুষের।

সেবা নিতে এসে ফরিদা বেগম তাই অকপটে বলেন, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি সেবা সহজলভ্য করেছেন যিনি আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি। সহকারী কমিশনার (এসি-ল্যান্ড) মনদীপ ঘরাই।  ছবি: মানজারুল ইসলাম

খালেক মুন্সির বক্তব্য,  ঘুষের সাড়ে চার হাজার টাকা যোগাড় করতে না পারায় এতো দিন এখানে আমার কাজটা আটকে ছিলো। এবার এসে ঘুষ তো লাগেই নি, উল্টো বড় অফিসার (এসি ল্যান্ড) আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। এখানে এখন ঘুষ ছাড়াই কাজ হয়।

ভোগান্তি ছাড়াই হয় নামজারি আর খারিজের কাজ। আরো হয় কৃষি ও অকৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত। ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, দেওয়ানি মোকদ্দমার তথ্য বিবরণী প্রস্তুত ও প্রেরণ, রেন্ট সার্টিফিকেট মোকদ্দমা পরিচালনা, গুচ্ছগ্রাম ও আদর্শ গ্রাম এবং আবাসন ও আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন, মিস মোকদ্দমা পরিচালনা, জরিপ কাজের তদারকি, জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কাজে এখন আর কোনো ভোগান্তিই নেই অভয়নগর ভূমি অফিসে।

বাবা রনজিৎ ঘরাই ১৯৮৮-১৯৮৯ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন অভয়নগরে। বাবার সুনামের পথেই হাঁটছেন মনদীপ ঘরাই। সেবা দিয়ে যাচ্ছেন মানুষকে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।