প্রাকৃতিক দুর্যোগে লিচুর তেমন ক্ষতি না হওয়ায় ব্যাপক হারে লিচু উৎপাদন হয়েছে। এজন্য বাগানি ও ব্যবসায়ী উভয়ই রয়েছেন খুশিতে।
লিচুর জন্য বিখ্যাত জেলা দিনাজপুরের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় দুলছে টসটসে রসালো লাল লিচু। দুই-এক দিনের মধ্যেই গাছ থেকে লিচু পাড়তে শুরু করবেন বাগানি ও মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীরা।
চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন ভালো হওয়ায় স্থানীয় বাগানি ও যেসব ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে অগ্রিম লিচু কিনেছেন তারা বেজায় খুশি। ক’দিনের মধ্যেই মাদ্রাজি জাতের এ লিচু বাজারে সরবরাহ করে প্রত্যাশিত লাভের আশা করছেন তারা। এরপর পর্যায়ক্রমে বোম্বাই, চায়না থ্রি-ফোর, বেদানাসহ অনান্য জাতের লিচুও বাজারে পাওয়া যাবে। দিনাজপুরের স্বনামধন্য মধুফল দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা হবে বিদেশেও। দেশের বাইরে লিচু রফতানির লক্ষ্যে স্থানীয় বাগানি ও লিচু ব্যবসায়ীরা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
গাছ থেকে ফল সরবরাহ না করা পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না দেখা দিলে, গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ লাভ করবেন বলে আশা করছেন মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী ও বাগানিরা। তবে সরবরাহ করার আগ পর্যন্ত প্রতিটি গাছের পরিচর্যা অব্যাহত থাকবে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাসিমপুর এলাকার লিচু চাষী মো. মোকলেছুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে দেশের অন্যান্য জেলায় ঝড় ও বৃষ্টিপাত হলেও দিনাজপুরে সামান্য বৃষ্টিপাত হওয়ায় লিচু উৎপাদনে তেমন কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। তবে গাছ থেকে লিচু সরবরাহের আগ পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ফলন ভালো হবে। এছাড়াও গাছে যে পরিমাণে ফল রয়েছে তা ধরে রাখতে সরবরাহের আগ পর্যন্ত কৃষি বিভাগের পরামর্শ মতে পরিচর্যা করে যেতে হবে। এর মধ্যেই পাকতে শুরু করেছে লিচু। এখনই খাওয়ার উপযোগী হয়ে উঠলেও দুই-একদিন পর গাছ থেকে সরবরাহ করলে লিচুর আসল স্বাদ পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
দিনাজপুর জেলার সদর, চিরিরবন্দর, বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল, ফুলবাড়ী ও বীরগঞ্জ উপজেলায় উল্লেখযোগ্য হারে লিচু চাষ হয়। এসব এলাকায় বেদানা, বোম্বাই, চায়না থ্রি-ফোর, মাদ্রাজিসহ নানা জাতের লিচু চাষ হয়।
ঢাকার বাদামতলী শাকিল ফল ভাণ্ডার থেকে আসা ফল ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েক মাস আগে যখন গাছে মুকুল দেখা দেয় তখনই মাসিমপুরের ২০টি গাছের একটি বাগান অগ্রিম কিনি। কেনার পর থেকে ত্রুটিপূর্ণভাবে গাছের পরিচর্যা করা হয়েছে। যা সরবরাহের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। দিনাজপুরের লিচু মিষ্টি রসে ভরা থাকায় মধুর সঙ্গে তুলনা করা হয়। এই মধুফলের দেশজুড়ে চাহিদা রয়েছে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, চলতি বছর দিনাজপুর জেলায় চার হাজার ১শ ৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ দেশজুড়ে টানা ঝড়-বৃষ্টিতে দিনাজপুরে এর তেমন কোনো প্রভাব না পড়ায় উচ্চ ফলন আশা করা যাচ্ছে। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। দিনাজপুরের প্রতিটি গাছের লিচুতে এখন মিষ্টি মধুর রসে ভরে গেছে। এই মুহূর্তে পোকার আক্রমণ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এই পরিস্থিতিতে যা করণীয় তা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
এসএনএস