ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এই আমাদের বিমানবন্দর রেলস্টেশন!

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
এই আমাদের বিমানবন্দর রেলস্টেশন! বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজের আশপাশ যেন আবর্জনার ভাগাড়। ছবি: আসিফ আজিজ

ধূমকেতু এক্সপ্রেস থেকে: গাড়ি থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর স্টপেজে নেমে রাস্তা পেরুলেই রেলেস্টশনের সীমানাপ্রাচীর। আগে ঘিঞ্জি দোকানপাট, আর বিচিত্র মানুষের পদচারণা দেখে বোঝা যেত এটা রেলস্টেশন এলাকা। আর এখন নোংরা কাদা-ময়লা দেখে!

অন্য সময়ের মতো বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) ভোরে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেসে চাপতেই বিমানবন্দর রেলেস্টশনে আসা।  বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের প্রবেশপথ দিয়েই আবর্জনার দুর্গন্ধ! ছবি: আসিফ আজিজআগে এই এলাকায় ঢুকে মানুষের ঠেলা-গুঁতা খেতে হতো, আর এখন পা গুনতে হয় ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে যুদ্ধ করে।

কমলাপুরের পর ঢাকা ও দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ স্টেশনের নেই কোনো জৌলুস। সম্প্রতি স্টেশনের সামনের সীমানাপ্রাচীরের মধ্যে থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে হকার ও দোকানপাট। তাতে মৌলিক পরিবর্তন কিছু আসেনি। কাদা ময়লার পাশাপাশি অটোরিকশা-প্রাইভেটকারের যত্রতত্র ইচ্ছেমতো পার্কিং রয়েছে আগের মতোই। বরং কিছুটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে আরও বেড়েছে তাদের দৌরাত্ম্য। নতুন করে কিছু হকার বসার আলামতও পাওয়া গেলো নীল পলিব্যাগে মোড়ানো চৌকি দেখে।

স্টেশন প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে রয়েছে দুটি প্রবেশপথ। দুটি পথের সিঁড়ি ও আশাপাশও চরম নোংরা। অযত্ন অবহেলা পরতে পরতে। দেয়াল প্রায় পুরোটা মোড়া পোস্টারে পোস্টারে। দেয়ালের সামনের দু'হাত জায়গা লোহার গরাদে ঘেরা। যেখানে মানাতো সুন্দর ফুলের বাগান, সেখানে রয়েছে ইট-কাঠ। গরাদের কোলজুড়ে আবার আবর্জনার ভাগাড়।  

বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ঢোকার প্রবেশপথ।  ছবি: আসিফ আজিজ
ঢুকতে সিঁড়ির বাঁদিকেও তাই। পলিব্যাগ, কলার খোসা কি নেই সেখানে। দুর্গন্ধে নাক ঢাকতে হয় রুমালে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে আবার গেটের ঠিক বাইরেই কাঁথা বিছিয়ে শুয়ে থাকতে দেখা গেলো একজনকে। আর রংচটা ভবনের কথা বাদই দিলাম।  


এটা প্রবেশমুখের চিত্র। আর বের হওয়ার সময় দক্ষিণদিকের গেটের বাইরে চিত্র আরও করুণ। প্রস্রাবের দুর্গন্ধে সেখানে এক মিনিট দাঁড়ানো দায়।

পুরো স্টেশনের আনাচে-কানাচে এভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা।  ছবি: আসিফ আজিজ
এই হলো আমাদের বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের বাইরের চিত্র। অথচ শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে যাতায়াত করা পুরো দেশের মানুষ ব্যবহার করে এ স্টেশন। বিদেশিরা সংখ্যায় কম হলেও অনেকসময় অবতরণ করে সোজা এ স্টেশনে এসেই সিলেট, শ্রীমঙ্গল কিংবা রাজশাহীর ট্রেন ধরেন। তাদের কাছে শুরুতেই ক্ষুণ্ণ হয় দেশের ভাবমূর্তি।  


ঢাকার বাইরে থেকে আসা যাত্রীরাও হয়তো প্রত্যাশা করেন বিমানবন্দরে সুন্দর একটি স্টেশন দেখার। হতাশ হন তারাও।  

স্বস্তি নেই স্টেশনে ঢুকেও। পুরো স্টেশনেই যত্রতত্র ছড়িয়ে নোংরা আবর্জনা। সম্প্রতি কিছু বিন দিলেও তা ব্যবহার হচ্ছে না। আর প্ল্যাটফর্মও যেন আরেকটি বড় ডাস্টবিন। কারও কোনো আবর্জনা ফেলার প্রয়োজন হলে বোধহয় উত্তম জায়গা হিসেবে প্ল্যাটফর্মকেই বেছে নেন।  

কারণ উচ্ছিষ্ট ভাতসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, চিপসের প্যাকেট, কলার খোসা- কি ফেলা হয়নি সখানে। আর দুর্গন্ধ সেখানে যেন বাড়তি পাওয়া!

আবর্জনা পড়ে আছে রেললাইনের পাতের খাঁজে খাঁজে।  ছবি: আসিফ আজিজ
নিশ্চয় এসব পরিষ্কারেরর জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে রেলের, সরকারের বেতনও নিচ্ছে। কিন্তু স্টেশনের অবস্থা যা তাই। এসবের জন্য যাত্রীদের দায়ও কম না। কিন্তু সচেতন করার কেউ নেই। নেই সচেতনতা সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে রেলের কাউকে পাওয়া গেলো না।  
এটা স্পষ্ট, যদি কেউ প্রথমবার এ স্টেশনে পা রাখেন, তাহলে অন্তত ভালো কোনো স্মৃতি কিংবা অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ফিরতে পারবেন না।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।