ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধে জেগেছে শিশু-কিশোররাই

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধে জেগেছে শিশু-কিশোররাই অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভলপমেন্ট-এসিডির ওরিয়েন্টেশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা

রাজশাহী: সবে মাত্র হাঁটতে শিখেছে এমন শিশুদের হতেও এখন চলে গেছে স্মার্ট ফোন। তবে কথা বলার জন্য নয়। ব্যবহার হচ্ছে খেলার কাজে। আর স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরদের হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে চলছে পড়াশোনা, ডেটা সংগ্রহ ও মজার মজার গেমিংসহ বহুবিধ ব্যবহার। হচ্ছে অপব্যবহারও।

এই কাজে ব্যবহার হচ্ছে সহজলভ্য ইন্টারনেট। তাই অনলাইনে ইন্টারনেটের অপব্যবহার ঠেকাতে রাজশাহীতে এবার মাঠে নেমেছে স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোররাই।

আর পেছন থেকে তাদের শক্তি ও সাহস জোগাচ্ছে অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভলপমেন্ট-এসিডি নামের উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংগঠন।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসিডি নামের স্থানীয় মানবাধিকার এই সংগঠনটি এরই মধ্যে রাজশাহীতে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে গ্রুপ তৈরি করে ফেলেছে। ইন্টারনেটের অপব্যবহারের মাধ্যমে শিশুদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ প্রকল্পের অধীনে তারা বর্তমানে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাঝে ক্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে।

এছাড়া অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিশুদের সোসালাইজেশন সেন্টারের মাধ্যমে তথ্য প্রদান, ওরিয়েন্টশন, কর্মশালা, গ্রুপ কাউন্সিলিং ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল এবং কুফলের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পৌঁছে দিচ্ছে তারা।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংস্থার যৌথ উদ্যোগে রাজশাহী মহানগরীর ১০টি হাইস্কুলে এ ধরনের কর্মশালা হয়েছে। যেখানে ২৫১ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে এই ব্যাপারে ধারণা নিয়েছে। এছাড়া ৪টি ওরিয়েন্টেশনে ৯২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশ নিয়ে তাদের সচেতনতা ও দক্ষতা বাড়িয়েছেন।

জানতে চাইলে এসিডি’র সমন্বয়কারী রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখন স্কুলগামী অনেক শিশুই অ্যান্ড্রোয়েড ও আইফোন ব্যবহার করে। আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে এসব ফোন দিয়ে তারা বিভিন্ন সাইটে যখন তখন ঢুকতে পারে। ইন্টারনেটের ব্যবহার করা শিশু ও উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীদের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ভিডিও গেইম, ফেসবুক, ইমো, ইউটিউব ইত্যাদি। আজকে পাঁচ বছরের শিশুও ভিডিও গেইমে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। আর উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীরা এই ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে অভিভাবকদের অগোচরে নিষিদ্ধ পর্ন সাইটে ঢুকে পড়ছে। এগুলো দেখে ক্রমেই তাতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। জড়িয়ে পড়ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। তাদের জাগাতেই এই উদ্যোগ।  

তাদের এক গবেষণার কথা উল্লেখ করে রবিউল ইসলাম বলেন, এসব উঠতি বয়সের শিশুরা অনেকেই সারারাত ধরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবসহ বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ছবি দেখে, ভিডিও চ্যাটিং করে এবং তা থেকে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে উত্তেজিত হয়ে ওঠে। অনেক সময় তারা কয়েকজন একসাথে বা কখনও কখনও একা একাও এইসব ছবি দেখছে।

অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই মোবাইল নিষিদ্ধ হলেও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এই আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। আবার রাত জেগে ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে সকালে স্বাভাবিক জীবন যাপনে অনীহা, স্কুলে যেতে না চাওয়া, ঘুম থেকে দেরিতে ওঠা এবং বেশি সময় মোবাইল নিয়ে বসে থাকার প্রবণতা বাড়ছে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। ফলে তাদের শিক্ষা ও ভবিষ্যত জীবন নিয়ে অভিভাবকরা হতাশ হয়ে পড়ছেন।

তাদের শুরু করা এই কর্মসূচির ফলে মহানগরীর বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের পাশাপাশি ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ক তথ্য প্রদান করা হচ্ছে।

রাজশাহীর জাতীয় তরুণ সংঘ স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মোস্তাকিম বলে, আগে তারা ইন্টারনেট বা ফেসবুকে প্রতিদিন চ্যাটিং করার মাধ্যমে মেয়েদের উত্যক্ত করতো। ওরিয়েন্টশনের পর এখন বুঝতে শিখেছে যে, এটা অন্যায় কাজ। এটা করা উচিত নয়। তাই এখন অন্যকেও সচেতন করছে তারা।

রাজশাহীর খাদেমুল ইসলাম হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক প্রিয়াংকা রায় বলেন, ইন্টারনেটের সুফল বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তবে স্কুল কলেজের উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যৌন উত্তেজক সাইডগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঠিক পথে ফিরে আনার ক্ষেত্রে তারা কাজ করছেন। অন্যদেরও এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসা জরুরি।

এসিডি’র নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার বলেন, শুরুতে শখের বশে মোবাইল ব্যবহার করলেও পরবর্তীতে আসক্তিতে পরিণত হয়। প্রায় সারা রাত জেগে অনেক ছেলেমেয়ে ইন্টারনেট থাকে, ফলে স্কুলে তারা অনিয়মিত হয়ে পড়ছে। লেখা-পড়ায় মনোনিবেশ করতে পারছে না।

তাই ক্লাসরুমেই যদি এর অপব্যবহার রোধে ম্যাসেজ দেওয়া হয় অনেক শিশু, তাহলে বিপথগামিতা থেকে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি শিক্ষকরা যদি স্কুলের পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকার কিশোর-কিশোরীদের এ বিষয়ে সচেতনতা করেন তাহলে তারা সঠিক পথে ফিরে আসার সুযোগ পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
এসএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।