ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

জমি কেনাবেচার টাকার দ্বন্দ্বে খুন হতে পারেন শাহাবুল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৭
জমি কেনাবেচার টাকার দ্বন্দ্বে খুন হতে পারেন শাহাবুল নিহত শাহাবুলের স্বজনদের আহাজারি, ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: জমি কেনাবেচার টাকার দ্বন্দ্বের জের ধরেই খুন হতে পারেন ব্যবসায়ী শাহাবুল ইসলাম। কারণ এনিয়ে প্রতিপক্ষ রুবেলের সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব চলছিলো শাহাবুলের।

তাই প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা এজন্যই তাকে পরিকল্পিতভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে।

এ অবস্থায় শাহাবুল হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া অন্যতম আসামি টাইগারকে (৩৫) তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পবা থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) আদালতে রিমান্ড মঞ্জুরের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল সন্ধ্যায় তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়।

তার কাছ থেকেই এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে অন্য আসামিদের গ্রেফতার ও মামলার তদন্ত স্বার্থে এখনই সব তখ্য বলা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পবা থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) হাসমত আলী বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসায়ী শাহাবুলকে দু’টি কারণে হত্যা করা হতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তারা। এর মধ্যে জমিজমা বিক্রি টাকা নিয়ে শাহাবুলের সঙ্গে প্রতিপক্ষ রুবেলের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বকেই তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশী।

এছাড়া মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে তারা আরও একটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন। সেটি হলো ক্রিকেট ব্যাটিং। তাই আপাতত এ দুই ক্লু ধরেই মামলার তদন্ত এগোচ্ছে।

হাসমত আলী বলেন, জমিজমা কেনাবেচার টাকা নিয়ে রুবেলের সঙ্গে শাহাবুলের দ্বন্দ্ব চলছিলো। চার মাস আগে রুবেল নয় লাখ টাকায় রাজশাহীর ফেত্তাপাড়া এলাকায় সাত কাঠা জমি কেনেন।

পরে প্রায় একই দামে জমিটি শাহাবুলের কাছে বিক্রি করেন রুবেল। এক মাস আগে রুবেলকে ছয় লাখ টাকা পরিশোধ করেন শাহাবুল। কিন্তু বাকি টাকা দিয়ে জমিটি দ্রুত রেজিস্ট্রির জন্যও শাহাবুলকে চাপ দিচ্ছিলেন রুবেল। ২১ সেপ্টেম্বর অপহরণের দিন শাহাবুল ব্যাংক থেকে আট লাখ টাকাও তোলেন।

কিন্তু পরে তার কাছ থেকেই আর সেই টাকা পাওয়া যায়নি। তাই ধারণা করা হচ্ছে অপহরণের পর এই আট লাখ নেওয়ার জন্য শাহাবুলকে নির্যাতন করা হয়।

পরে পরিকল্পিতভাবে অন্য কোথাও হত্যা করে তার মরদেহটি পবার কৈকুড়ি এলাকায় সড়কের পাশের জঙ্গলে ফেলে আসামিরা পালিয়ে যায়।

এছাড়া নিহতের আত্মীয়রা জানিয়েছেন, মহানগরীর দাশপুকুর এলাকায় শালুর চেম্বারে দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেটের ব্যাটিং (বাজি) নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আসামি রুবেল ও টাইগার ব্যাটিং চক্রের মূল হোতা শালুর ডান হাত হিসেবে কাজ করতো।

মাছ চাষ ও জমি কেনাবেচা ব্যবসার পাশাপাশি শাহাবুল ওই চেম্বারে নিয়মিত ক্রিকেট ব্যাটিং খেলতেন। কয়েক মাস আগে শাহাবুল ৪০ লাখ টাকা জিতেও নেন।

কিন্তু তাকে টাকা না দিয়ে ঘুরাতে থাকে শালু, রুবেল ও টাইগার। এনিয়ে আসামিদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ব্যাটিংয়ের টাকা আদায়ে শাহাবুল এলাকার বড় ভাইদের শরণাপন্নও হন। তবে এখনও তার সত্যতা মেলেনি। কিন্তু এই কারণটিকে ফেলে দেওয়া যাচ্ছেনা বলেও জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

পবা থানার পুলিশ পরিদর্শক হাসমত আলী বলেন, মূলত জমি কেনাবেচার টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরেই শাহাবুলকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এরই মধ্যে টাইগারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু তথ্যও পাওয়া গেছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অন্যরা গ্রেফতার হলে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার রহস্য শিগগিরই উন্মোচন করা সম্ভব হবে বলেও আশা করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর পবা উপজেলার দারুশা ইউনিয়নের কৈকুড়ি এলাকার রাজশাহী-গোদাগাড়ী সড়কের পাশের জঙ্গল থেকে মাছ ব্যবসায়ী শাহাবুল ইসলামের (৩২) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি মহানগরীর কাশিয়াডাঙা ফেত্তাপাড়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। ওইদিনই শাহাবুলের মা মালেকা বেগম পবা থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আসামিরা হলেন মহানগরীর দাশপুকুর চামারপাড়া এলাকার রাব্বুল, রাব্বুলের তিন ছেলে রুবেল, সোহেল ও লাভলু এবং রুবেলের গাড়িচালক বাবলু ও একই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী টাইগার। এর মধ্যে টাইগারকে গ্রেফতার করে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৭
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।