ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জিরানি খালে শিশু নিখোঁজ

‘আমার হৃদয়রে খুঁইজা দেও’

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
‘আমার হৃদয়রে খুঁইজা দেও’ ১২৫ ঘণ্টায়ও উদ্ধার হয়নি ৩ বছরের শিশু হৃদয়

ঢাকা: ‘আমার পোলা খালে পইড়া গেছে, কতো লোক মিল্লা আমার হৃদয়রে খুঁজতাছে, কেউ বলে পায় না। আমি জানি না, তোমরা আমার পোলারে খুঁইজা দেও, আমি খালি একবার দেখমু’।

সন্তান হারানোর বেদনায় এভাবেই আর্তনাদ করে ফিরছেন শিশু হৃদয়ের মা রোজি বেগম। কিন্তু এলাকাবাসীর সহায়তায় টানা ছয়দিন ধরে উদ্ধার অভিযান চালিয়েও জিরানি খালে নিখোঁজ তিন বছরের সন্তানটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

বাঁশের ভাঙা সাঁকো দিয়ে পার হতে গিয়ে রাজধানীর মুগদা থানার মদিনাবাগের ওই খালে পড়ে গত ১৫ অক্টোবর বিকেল ৫টার দিকে নিখোঁজ হয় হৃদয়। খবর পেয়ে ওইদিন সন্ধ্যা থেকেই উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) রাত ১০টা পর্যন্ত টানা ১২৫ ঘণ্টায়ও হৃদয়কে খুঁজে না পাওয়ার কথা জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর শাকিল নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, ‘নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধারে টানা অভিযান এখনো চলছে। তাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা থামছি না’।

তিনি বলেন, ‘ডুবুরিরা জিরানি খালে কিছুক্ষণ পর পর নেমে তল্লা‍শি চালাচ্ছেন। তবে স্থানীয়রা প্রায় ৩০ বছর ধরে খালটিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পুরু স্তর তৈরি হয়েছে। ডোবার যে অবস্থা, তাতে আমাদের কাজ করতে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে।

‘তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বয় প্রয়োজন। আমরা সেভাবেই কাজ করছি’।

মা রোজিনা জানান, নিখোঁজ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগেও হৃদয় তার সঙ্গে ছিল। আদর করে তার মুখে ভাত তুলে দিয়েছিল। এটিই ছিল মা-ছেলের শেষ আদর-ভালোবাসা।

তিনি আর্তনাদ করে বার বারই বলছেন, ‘যদি বাড়ির ম্যানেজার সাঁকোটা ঠিক করতেন, তাইলে আমার পোলাটা খালে পড়তো না’।

মুগদার মদিনাবাগের জিরানি খালের পাশে টিনশেড বাড়ির একটি ঘরে ভাড়া থাকে নিখোঁজ হৃদয়ের পরিবার। মা রোজি ও দিনমজুর বাবা কামালসহ তার দুই বোন সাথি (৯) ও তামান্না (১) একসঙ্গেই বসবাস করতেন।

সন্তান হারানোর বেদনায় আর্তনাদ করে ফিরছেন মা রোজি বেগম।  ছবি: সুমন শেখ হৃদয়ের মা রোজি বাংলানিউজকে জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী এলাকায়। তবে ছোটবেলা থেকেই তিনি মুগদার এই মদিনাবাগ এলাকায় বসবাস করে আসছেন। গত তিনমাস ধরে খালের পাশের এই বাড়ির ঘরটি ১ হাজার ৮০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে থাকছেন।

জিরানি খালটি ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ (ওঅ্যান্ডএম) বিভাগের-১ তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সেখানে ঢাকা ওয়াসার নির্দেশিকা সাইনবোর্ডে উল্লেখ রয়েছে- ‘ঢাকা মহানগরীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত রাখতে খালের প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না। খালের পানিতে সরাসরি শিল্পবর্জ্য, টয়লেটের সংযোগ ও ময়লা-আবর্জনা ফেলা দণ্ডনীয় অপরাধ’।

স্থানীয়দের অভিযোগ, খালে কেবলমাত্র ঢাকা ওয়াসার একটি সাইনবোর্ডটিই আছে। কিন্তু মানুষ ময়লা ফেলে স্তুপ করে ফেললেও সেদিকে কোনো নজর নেই সংস্থাটির।

জিরানি খালের ওপরে বাঁশের মাচা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে অনেক ঘর-বাড়ি। খালের আশপাশের বাড়িগুলোতে যাতায়াতে স্থানীয়রা তৈরি করছেন ঝুকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোও। একদিকে ময়লা ফেলা হচ্ছে, আর অন্যদিকে খালের ওপর তৈরি হচ্ছে বাঁশের সাঁকো। কিন্তু খাল দেখভালের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ওয়াসা অনেকটাই উদাসিন।

স্থানীয়রা আরও জানান, হৃদয় যে সাঁকো থেকে পড়ে নিখোঁজ হয়েছে, সেটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। এর আগেও এক শিশুসহ তিনজন এ খালে পড়ে মারা গেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৭
এসজেএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।