রোববার (২২ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নিয়ে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা এসব সুপারিশ করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে ওই সংলাপে নির্বাচন কমিশনাররা, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ১১টার দিকে পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা সভাকক্ষে উপস্থিত হলে সিইসি সূচনা বক্তব্য দেন। এর পর ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সংলাপের আনুষ্ঠানিক আলোচনা।
এ সময় ভোটার তালিকা থার্ড পার্টি (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে অডিট করার জন্য সুপারিশ করেন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) প্রতিনিধি আব্দুল আলীম।
তিনি বলেন, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর আগ পর্যন্ত পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র প্রদান নিয়ে গড়িমসি করা হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
এছাড়া কেন্দ্রে প্রবেশ করে পর্যবেক্ষকদের সময় নির্ধারণ ও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুপারিশ করেন আব্দুল আলীম।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কোনো পর্যবেক্ষকের কার্যক্রম তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি কোনো কারণে এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনও বাতিল করার নজির নেই।
‘কাজেই পর্যবেক্ষকরা ঠিকমতো তাদের দায়িত্ব পালন করছেন কিনা, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ’
ইডব্লিউজি’র প্রতিনিধি আব্দুল আলীম বলেন, ভোটার তালিকা প্রণয়ন দিবস উদযাপন করা দরকার। প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি ভোটার দিবস উদযাপন এবং সেদিন ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু হলে সবার ভেতরেই একটা সচেতনতা সৃষ্টি হবে।
পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেয়ার ইলেকশন মনিটিরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা ) ভাইস প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের বয়স কমিয়ে ২৫ থেকে ২০ বছর করা উচিত। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের স্থানীয়ভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করার পক্ষেও মত দেন তিনি।
মুনিরা খান বলেন, ইভিএম নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, আমি মনে করি-এখনই এটা শুরু করা উচিত নয়। এটা তর্কের ভেতরে চলে যেতে পারে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি আনোয়ার ফরায়েজী পর্যক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেওয়ার কথা বলেন।
পর্যবেক্ষকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের উপর জোর দিয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) প্রতিনিধি ড. নাজমুল আহসান কমিল উল্লাহ বলেন, কোনো সংস্থা কমিশন থেকে নিবন্ধন নিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে কিনা, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা-তা খতিয়ে দেখতে হবে।
‘দায়িত্বপালন না করলে এ ধরনের ভূঁইফোড়দের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। ’
সংলাপে ৩০ টির মতো পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি অংশ নেয়। এ সময় তাদের নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন থেকে দায়িত্ব পালন করার পরামর্শ দেন সিইসি।
গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধি এবং ২৪ আগাস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন।
সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের সময় সারাদেশে সেনা মোতায়ন, বিচারিক ক্ষমতাসহ সশ্রস্ত্র বাহিনী মোতায়েন, না ভোটের ব্যবস্থা, প্রবাসে ভোটারধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা, অন্তবর্তীকালীন ও অস্থায়ী সরকার গঠনের মতো সুপারিশ আসে।
অনেকে আবার সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন না করা ও ইভিএম বা ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিভিএম) ব্যবহার না করারও সুপারিশ করেছেন।
আগামী ২৩ অক্টোবর নারী নেত্রী ও ২৪ অক্টোবর নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৭
ইইউডি/এমএ