সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রভাবশালী অনেক দেশই এ সমস্যা সমাধানের পক্ষে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের উদ্যোগে তাদের সায়ও রয়েছে।
তবে সমস্যার দ্রুত সমাধানে রাশিয়া, চীন ও ভারতের তৎপরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ তিন দেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তারা তাই মিয়ানমারকে জোরালোভাবে চাপ দিলে অতি দ্রুতই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে সংকট নিরসন সম্ভব হবে।
মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশিদিন তাদেরকে রাখা নিরাপদ মনে করছে না সরকার। কারণ, নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতার সুযোগ নিতে পারে। ইতোমধ্যেই দু’এক জন করে রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছেন।
এখন পর্যন্ত আসা ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছেন। এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় ধরে রাখাটাও সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা দীর্ঘদিন থাকলে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও পরিবেশগত হুমকি দেখা দিতে পারে বলেও মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও একই আশঙ্কা প্রকাশ করছে।
রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোই এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। এ কারণেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাশিয়া, চীন ও ভারতের সমর্থন নেওয়ার চেষ্টা চলছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালানো হচ্ছে।
এর অংশ হিসেবে আগামী মাসে রাশিয়া ও চীনে সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি পাঠানো হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ঢাকায় সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনায় রোববার (২২ অক্টোবর) রোহিঙ্গা ইস্যুটি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সমস্যার সমাধানে ভারতের জোরালো পদক্ষেপও চাওয়া হয়েছে।
সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দেশগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ানো হবে।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) মিয়ানমারে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। আগামী মাসে আসেম জোটভুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দিতে দেশটিতে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীও। সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের অবস্থান জোরালোভাবে জানাবেন।
সরকারের একজন সিনিয়র মন্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, ‘মিয়ানমারকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাশিয়া, চীন ও ভারতের আছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কার্যকর ভূমিকাও চাই। অনেকেই খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। আবার কোনো কোনো রাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের বাসস্থান গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এটি সমস্যার স্থায়ী সমাধান বলে আমরা মনে করি না’।
তার মতে, ‘এক লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে আশ্রয় দেওয়া অনেক দেশের জন্যই কোনো সমস্যার নয়। বিশেষ করে সৌদি আরব, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ অনেক মুসলিম দেশই এটা করতে পারে। তাতে বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ বাংলাদেশের ওপর এ বাড়তি চাপ কমতো’।
‘কিন্তু কেউই এগিয়ে আসেনি। বাংলাদেশকেই ঝুঁকি নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে হয়েছে। তাই এ সমস্যার সমাধানে যেখানে প্রয়োজন, সেখানেই তৎপরতা চালানো হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৭
এসকে/এএসআর