বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বিজয়া পুনর্মিলনী পরিষদ-২০১৭ এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘বিজয়া পুর্নমিলনী’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
সমিতির অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সভায় দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা।
তিনি বলেন, আমাদের মহান সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বিধৃত আছে, “(১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে; (খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে। (২) কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোন ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাহাকে কোন ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না। ”
বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, “মানুষ সমাজবদ্ধজীব। সমাজজীবনে একই ভূখন্ডে, একই বলয়ে বসবাস করতে হলে নানান ধর্ম গৌত্র বর্ণ সম্প্রদায় সম্পর্কে বিভিন্ন ভাষাভাষী লোকের সঙ্গে বসবাস করতে হয়। একটি বাগানে নানান জাতের ফুল থাকে তেমনি একটি রাজ্যে বা রাষ্ট্রে নানান জাতের মানুষ থাকবে। সুতরাং নানান জাতের সঙ্গে সহাবস্থান ঐক্য সংহতির মাধ্যমে একত্রে বসবাস করে মানবজাতির ধর্ম ও সমাজের উন্নয়ন করতে সকলকে বদ্ধ পরিকর হতে হবে। ”
তিনি আরও বলেন, “ধর্ম ব্যক্তি বিশেষের জন্য স্বতন্ত্র নয়, ধর্ম কোনো রকম বৈষম্য সৃষ্টি করে না। ধর্মের গ্রহণ বর্জন এবং ধর্মের আবেদন সকলের জন্য সমান। এমনকি ধর্মের অধিকারও সকলের জন্য সমান। ধর্ম জাত-পাত চিনবে না। জাত-পাত বিচারও করবে না। ধর্ম নারী পুরুষ বিভাজন করবে না, করে না। ধর্ম কোনো সম্প্রদায় বা সম্প্রদায়িকতার মধ্যে আবদ্ধ হতে চায় না। সূর্য যেমন সকলের জন্য সমান, তেমনি ধর্মও। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায়, বিশুদ্ধ বায়ু যেমন স্বাস্থ্যের পক্ষে হিতকর, তেমনি স্বধর্মও সকলের জন্য মঙ্গলপ্রদ। ”
বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বলেন, মহামারী এইডস যেমন কোনো ধর্ম বর্ণ বিচার করে না, তেমনি ধর্ম জাত-পাত বিচার করে না। সুতরাং ধর্ম হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান ধর্মের ক্ষেত্রে কোনো বিচার্য বিষয় নয়। ধর্মের স্বভাবই ধর্মই। ধর্ম নিজ আভায় সার্বজনীন বাণীতে উদ্ভাসিত। জ্ঞানের বহ্নি শিখায় প্রজ্জলিত হয়ে দেশের প্রতিটি মানুষ অসম্প্রাদিয়কতায় অন্ধকার কূপমণ্ডুকতা আর অকল্যাণকর সকল বাধা পেরিয়ে একটি উন্নত সমাজ গঠনে এগিয়ে আসবে এটাই সকলের প্রত্যাশা। ”
দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি ধর্ম যার যার সমাজ রাষ্ট্র উৎসব সবার, এ মর্মবাণী অনুধাবন করতে পারলে বিশ্বের মানুষ সম্প্রীতি ভ্রাতৃত্বের চেতনায় উদ্ধুদ হবে। হিংসা দ্বেষ ভেদাভেদ ভুলে শান্তির পৃথিবী গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত হবে। সকল সংকীর্ণতা স্বার্থপরতা কূপমণ্ডুকতা পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের সমাজ দেশকে গড়ে তুলবো, দেশকে বিশ্ব সভায় গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত করবো- এ হোক দেশবাসীর দৃঢ় অঙ্গীকার। ”
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার, স্বামী ধ্রুবেশানন্দ মহারাজ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিসহ আইনজীবীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৭
ইএস/এমজেএফ