ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘মৃৎশিল্পে শিশুর স্বপ্নের আবাস’ দৃক গ্যালারিতে

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৭
‘মৃৎশিল্পে শিশুর স্বপ্নের আবাস’ দৃক গ্যালারিতে ‘মৃৎশিল্পে শিশুর স্বপ্নের আবাস’ দৃক গ্যালারিতে

ঢাকা: “এটা গাছ। দাদুবাড়ির গাছটার মতো বড় গাছ। ওর পাশে ওটা প্রজাপতি। তার পাশে আরো একটা প্রজাপতি। আর এ ঝুড়িটার মধ্যে ফল; আম, কমলা আর কলা। এটা ললিপপ আর এইটা দুধ! আমি সবসময় দুধ খাই তো, তাই এটা এখানে!”

এভাবেই নিজের ভাস্কর্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলো ছোট্ট সোনামণি আরিশা মাশরাফি এনায়েত। বয়স তার মাত্র তিন বছর।

নিজের প্রিয় ‘মেয়ে’ (পুতুল) কে কোলে নিয়েই সে সবার সামনে মেলে ধরেছে তার স্বপ্ন। মাটির ভাস্কর্যে রং লাগিয়ে তার দাদুবাড়ির গাছ, বড় প্রজাপতি আর প্রিয় খাবারগুলোকে সবার সামনে আনতে পেরে ভীষণ খুশি সে।

শুধু কি আরিশা? তার মতো আরো ৯৫ শিশু মাটির ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তুলেছে তাদের স্বপ্নের আবাস। আর এদের সবার বয়স তিন থেকে ১৪ বছরের মধ্যে।

শিশুদের মৃৎশিল্পের এসব ভাস্কর্য নিয়ে রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) শুরু হয়েছে দু’দিন ব্যাপী প্রদর্শনী।  

স্বপ্নের শহর, আমার মাটির ঘর, আমার সবুজ শহর, ভূতের বাড়িসহ শিশুরা তাদের স্বপ্নকে রূপ দিয়েছে মৃৎশিল্পের মাধ্যমে। শিশুদের স্বপ্ন ও ভাবনা যে কত সুন্দর, সহজ সরল আর স্নিগ্ধ, তার প্রমাণ এ প্রদর্শনী।

কথা হচ্ছিলো আদিয়ান আরাফ স্নিগ্ধ’র সঙ্গে। আট বছর বয়সী এ ভাস্কর নিজের মতো করেই তার ভাস্করের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় বাংলানিউজের। আঙুলের ইশারায় তার মাটির ঘরটিকে উদ্দেশ্য করে বলে, “ঘরের সামনের এ খেলার মাঠটা আমার আর আমার বন্ধুদের জন্য। মাঠের পাশে একটা দোলনাও রয়েছে। ওখানে বসে দোল খাচ্ছে আমার বন্ধু। আমরা মাঠে ঘুড়ি ওড়ায়। মাঠের পাশে নদী আর নৌকা। নদী থেকে কলসিতে পানি আনছে আম্মু। আর মাঠের এ হেলিকপ্টারটা আমার। ”

শিশুদের সহজ শৈলীতে মুগ্ধ গুণী শিল্পীরাও। প্রদর্শনী ঘুরে দেখছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী সব্যসাচী হাজরা। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শিশুদের তৈরি এসব ভাস্কর্যের বিষয় বৈচিত্র ও স্থাপত্যের মিশেল অনন্য। শিশুরা নিজেদের এতোটা সুন্দর করে উপস্থাপন করবে, ভাবিনি কখনো!

‘মৃৎশিল্পে শিশুদের স্বপ্নের আবাস’ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়। শুক্রবার এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক চিত্রশিল্পী মণিরুজ্জামান, বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. তপন বাগচী, চিত্রশিল্পী সব্যসাচী হাজরা, ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষ ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স এর পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের পরিচালক তামান্না সেতু ও অধ্যক্ষ মেহেদী হাসানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। .

প্রদর্শনী সম্পর্কে বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের পরিচালক তামান্না সেতু বলেন, এ আয়োজন শিশুদের স্থাপত্যশৈলীর বিকাশের একটি বড় মাধ্যম। এর মধ্য দিয়েই আগামী দিনের বড় বড় ভাস্কর উঠে আসবে।

খুব পছন্দ হলে নিজের জন্যে কেনা যাবে প্রদর্শনীর ভাস্কর্যগুলো। প্রতিটির শুভেচ্ছা মূল্য ১৫০০ টাকা। আর এসব ভাস্কর্য বিক্রির অর্থ বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের পাঠাগার উন্নয়নের কাজে ব্যবহৃত হবে বলেও জানান তামান্না সেতু।

বাংলাদেশ সময়: ০২০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৭
এইচএমএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।