ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

দেয়ালভাঙা, ছাদফুটো স্কুলঘরে শিশুদের পাঠদান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৭
দেয়ালভাঙা, ছাদফুটো স্কুলঘরে শিশুদের পাঠদান দেয়ালভাঙা, ছাদফুটো স্কুলঘরে শিশুদের পাঠদান; ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: আড়াই মাস আগে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যাকবলিত হয় দিনাজপুর। সেই বন্যার পানির প্রচণ্ড তোড়ে দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে আলম নূর হোসেন, মৌসুমি আক্তার শিল্পী রাণীদের স্কুলঘরটির। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত স্কুলটিতে শিক্ষার আলোবঞ্চিত, হতদরিদ্র পরিবারের শিশুদের বিনা খরচে পাঠদান করা হয়।

বন্যার পর ভাঙ্গা স্কুলঘরে জোড়া-তালি দিয়েই চলছে পাঠদান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে এক ঝাঁক কোমলমতি শিশু।

মাথার উপর বাঁশের চাটাই। ধসে পড়া দেয়ালের ফাঁক বন্ধ করা হয়েছে টুকরো টিন দিয়ে। দুপুরে মাথার উপর যখন সূর্য আসে, তখন তীব্র রোদের তাপে গা পোড়ে এসব ছোট ছোট শিশুর।  তখন ওদের আর কষ্টের সীমা থাকে না।

দিনাজপুর সদর উপজেলার ১০নং কমলপুর ইউনিয়নের দাইনুড় উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেল।  উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পাঠদান একটি মাটির ঘরেই হয়।  

উপ-আনুষ্ঠানিক এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে প্রতি পাঁচ বছর পরপর হতদরিদ্র পরিবারের শিশুদের ভর্তি করা হয়। প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত তাদের পড়ানো হয়। এরপর আবার নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ইতিপূর্বে দুটি ব্যাচ এই স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে গেছে। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে স্থানীয় দাইনুড় ও এর আশপাশের গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ৩১ জন শিশুকে স্কুলটিতে ভর্তি করা হয়। দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় বাড়ির বা পিতা-মাতার কাজে সহযোগিতার করতে হয় বলে মাঝেমধ্যে অনেক শিশুকে স্কুল কামাই করতে হয়।  

রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলটির একমাত্র শিক্ষিকা মোছা. নূর নেহার। তিনি উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বর্ণমালা লিখতে দিয়েছেন। এদিন ৩১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত দেখা গেল ২৬ জনকে। সকলেই মাটিতে বসে নিজেদের মতো করে শ্লেটে লিখতে ব্যস্ত। লেখা শেষে নূর নেহার একে একে সকলের লেখা দেখলেন।  

স্কুল ছুটির সময় কথা হয় স্কুলটির ছাত্র আলম নূর হোসেনের সাথে।  সে জানায়, জানুয়ারি মাসে পড়াশুনা করার জন্য উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে। স্কুলটিতে পড়াশুনা করতে টাকা লাগে না।  খাতা, কলম, শ্লেট, পেন্সিলসহ পড়ার সকল সরঞ্জাম স্কুল কর্তপক্ষ দেয়। এজন্য বাড়ি থেকে এখানে পড়ার সুযোগ দিয়েছে। তা না হলে বাড়ি থেকে তাকে স্কুলে পড়ার অনুমতি দিতো না। কারণ পড়ালেখার পেছনে টাকা খরচ করার সামর্থ্য তাদের পরিবারের নেই। তার বাবা মো. আকবর আলী একজন কৃষিশ্রমিক। অভাবের কারণে বড় বোন ফরিদার পড়াশুনা করা হয়নি।

আলম নূর হোসেনের ভাষায়, মাঝেমধ্যে বাড়িতে কাজ থাকলে আর স্কুলে আসতে পারি না। বন্যায় আমাদের স্কুলের দেয়াল ধসে গেছে। মাথার উপরের টিন ভেঙ্গে গেছে। এখন দুপুরবেলা ক্লাসে রোদ পড়ে। গরমে খুবই কষ্ট হয়। আমাদের স্কুলটি মেরামত করে পাঠদানের উপযোগী করার অনুরোধ করছি।  

দাইনুড় উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নূর নেহার বাংলা নিউজকে জানান, ইতিপূর্বে দুটি ব্যাচ এই স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে বের হয়েছে। চলতি বছর ৩১ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। তারা পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে এই স্কুল থেকে বের হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পাঠদানের বই, খাতা, শ্লেট, কলম, পেন্সিলসহ সকল সরঞ্জাম সরবরাহ করে। হতদরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষার আলো দেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় একটি এনজিও। গত ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু দাইনুড় উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুটি ব্যাচ বের হয়ে তৃতীয় ব্যাচ চলছে। বন্যার কারণে স্কুলটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ দ্রুত স্কুলটি মেরামত করে পাঠদানের উপযোগী করে গড়ে তুলবে বলে তিনি আশাবাদী।  

বাংলাদেশ সময়:১৩২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৭
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।