রোববার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে ‘১৩৭তম আইপিইউ এসেম্বলি, সেন্টপিটার্সবার্গ, রাশিয়া: বাংলাদেশের অর্জন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া একথা বলেন।
ডেপুটি স্পিকার বলেন, আগামী ১ থেকে ৮ নভেম্বর ঢাকায় সিপিএ’র ৬৩তম সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কেউ না কেউ সাধারণ আলোচনায় অতিরিক্ত এজেন্ডা হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি উপস্থাপন করবে।
সম্প্রতি রাশিয়ার সেন্টপিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের ১৩৭তম এসেম্বলিতে বাংলাদেশ থেকে ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছে। সেখানে সাধারণ আলোচনায় ইমারজেন্সি আইটেম হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি গৃহীত হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব উত্থাপন করলে ভোটাভুটিতে সর্বসম্মতিক্রমে সেটি পাস হয়।
ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, সাধারণ আলোচনায় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়টি বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল জোরালোভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করেছে। এ সমস্যা মোকাবেলায় মিয়ানমারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করতে আইপিইউভুক্ত দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্ব নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছি। ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে। এর আগেও নির্যাতনের শিকার হয়ে অসংখ্য রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সে সময় জেনেভায় অনুষ্ঠিত ১৩৫তম আইপিইউ এসেম্বলিতেও রোহিঙ্গা ইস্যুটি আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে আনতে চেষ্টা করেছি। এবারও ১৩৭তম এসেম্বলিতে সে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ১৩৭তম আইপিইউ এসেম্বলিতে ইমারজেন্সি আইটেম হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি গৃহীত হয়েছে। আইপিইউ এসেম্বলির সাধারণ সভায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ট ভোটে গৃহীত হয়। ইমারজেন্সি আইটেম হিসেবে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত রোহিঙ্গা ইস্যুটি ভোটাভুটিতে ১০২৭ ভোট পেয়ে গৃহীত হয়। এর বিপরীতে মিয়ানমার প্রস্তাবের পক্ষে পায় মাত্র ৪৭ ভোট।
আইপিইউ সাধারণ সভায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি গৃহীত হবার খবর আন্তর্জাতিক মহল খুবই গুরুত্বের সঙ্গে এখন বিবেচনা করছেন-- বলেন ডেপুটি স্পিকার।
‘জাতিসংঘের চেয়ে বয়সে পুরনো, সারা বিশ্বের ১৭৩টি দেশের ৬৫০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল সর্ববৃহৎ সংসদীয় ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুটি গৃহীত হবার বিষয়টি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমতের প্রতিফলন বলে বিবেচনা করা হচ্ছে’।
এসময় ডেপুটি স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় মনোবল এবং মহানুভবতার কারণে আমরা তাদের আশ্রয় এবং খাবারের ব্যবস্থা করছি। কিন্তু এই মানবিক বিপর্যয়ের স্থায়ী সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে। বিশ্বসম্প্রদায় যদি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দুরাবস্থা স্বচক্ষে দেখতেন তাহলে জানতে পারতেন, কিভাবে মিয়ানমারে গণহত্যা হয়েছে। ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, নারী ও শিশু হত্যাসহ অমানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছে যা বিশ্বমানবতাকে কেবল আহত করেনি, যা ঘটেছে তা হয়েছে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ও পরিকল্পিত জাতিগত নিধন। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা দিয়ে নিঃশর্তভাবে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখাতে হবে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত ৫ দফা প্রস্তাবনা এবং কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
মতবিনিয় সভায় সংসদের প্রধান হুইপ আ.স.ম. ফিরোজ, হুইপ শহিদুজ্জামান সরকার, আতিউর রহমান আতিক, সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, ফজলে করিম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৭
এসএম/এসএইচ