ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জাতীয় নৌ-কনভেনশনে ১৪ দফা ঘোষণা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৭
জাতীয় নৌ-কনভেনশনে ১৪ দফা ঘোষণা কনভেনশনের আলোচক ও বক্তারা

ঢাকা: নদ-নদী রক্ষা ও নৌ-পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘১৪ দফা ঘোষণা’র মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ‘প্রথম জাতীয় নৌ-কনভেনশন ২০১৭’।

রোববার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে দিনব্যাপী কনভেনশনের আয়োজন করে বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি।

সকালে সুসজ্জিত র‌্যালি জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে কমরেড মণি সিংহ সড়কে গিয়ে শেষ হয়।

এরপর সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় কনভেনশন।  

জাতীয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা প্রবীণ রাজনীতিবিদ মনজুরুল আহসান খানের সভাপতিত্বে  ও সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে’র সঞ্চালনায় কনভেনশনে বিষয়ভিত্তিক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের প্রাক্তন নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন এ কে এম শফিকউল্লাহ ‘সমুদ্রগামী নৌ-বাণিজ্য’, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার প্রাক্তন মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক ‘বাংলাদেশের নদ-নদী ও পানিসম্পদ’ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নৌ-যান ও নৌ-যন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মীর তারেক আলী ‘নিরাপদ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন: সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

প্রবন্ধগুলোর ওপর আলোচনা করেন লেখক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মহিউদ্দিন আহমেদ, অ্যাম্বেসেডর শীর্ষেন্দু শেখর চাকমা, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী, নৌ-বাণিজ্য দফতরের প্রাক্তন মুখ্য কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মো. হাবিবুর রহমান, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ রশীদুজ্জামান মোড়ল, অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ বদিউজ্জামান বাদল, বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিভোয়া) সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল হক, বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব চৌধুরী আশিকুল আলম ও বাংলাদেশ ইনল্যান্ড মাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিমা) সভাপতি কাজী আবদুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল।

কনভেনশনে হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়াকে সভাপতি, সঞ্জিব বিশ্বাসকে জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি, আশীষ কুমার দে-কে সাধারণ সম্পাদক ও মুর্শিকুল ইসলাম শিমুলকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয় কমিটির ১৭ সদস্যের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়।

কনভেনশনে তিন প্রবন্ধকার এবং আলোচকদের বক্তব্য ও মতামতের ভিত্তিতে নদ-নদী রক্ষা ও নৌ-পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৪ দফা সুপারিশ প্রণয়ন ও ঘোষণা দেওয়া হয়।

১৪ দফা ঘোষণার মধ্যে রয়েছে-  বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় অভ্যন্তরীণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নৌ-পরিবহন ব্যবস্থাকে ‘প্রধান পরিবহন’ খাত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া ও প্রতিষ্ঠা, অভ্যন্তরীণ জলসীমায় নৌ-চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সকল নদ-নদী, হাওর-বাওড়, খাল-বিল সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ এবং বিলুপ্ত নৌ-পথ পুনরুদ্ধারে গত চার দশকে দূষণ, দখল, ভরাট ও অবহেলার শিকার সকল নদী পুনরুদ্ধার ও খননের মাধ্যমে সব ধরনের নৌ-যান চলাচলের উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌ-পথ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া, সারা বছর সকল নৌ-পথ সচল রাখতে নিয়মিত প্রয়োজনীয় পলি অপসারণে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগকে আধুনিক, জনবলসমৃদ্ধ ও শক্তিশালী এবং অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় যাত্রীসেবা বাড়াতে বিআইডব্লিউটিসি’র বহরে নৌ-যান বৃদ্ধি ও রাষ্ট্রায়ত্ত এ বাণিজ্যিক সংস্থার কাজে গতিশীলতা বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

নৌ-দুর্ঘটনা হ্রাসে অভ্যন্তরীণ নৌ-যানের মাস্টারশিপ-ড্রাইভারশিপ পরীক্ষা নেওয়া, নৌ-যানের নকশা অনুমোদন ও দুর্ঘটনা তদন্তে পৃথক পৃথক স্বাধীন ইউনিট গঠন, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ব্যবস্থাকে জনপ্রিয় করতে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন আইন সংশোধন, প্রাকৃতিক পানিসম্পদ কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের স্বার্থে ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রগামী নৌ-বাণিজ্যের প্রসারতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ এবং সমুদ্রগামী নৌ-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) বহরে জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি করে রাষ্ট্রায়ত্ত এ বাণিজ্যিক সংস্থাটির কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।  

মেরিন একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রিধারী সমুদ্রগামী জাহাজের বেকার ৮০০ অফিসার/ক্যাডেটের চাকরি নিশ্চিতকরণে ভারত, সিঙ্গাপুর ও দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ‘ভিসা জটিলতা’ নিরসনে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া, ভবিষ্যতে ক্যাডেট ও নাবিকদের বেকারত্ব কমাতে ‘বেসরকারি মেরিটাইম ইনস্টিটিউট’ অনুমোদনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারসহ অযোগ্য ইনস্টিটিউটগুলোর অনুমোদন বাতিল, অভ্যন্তরীণ, সমুদ্র ও উপকূলীয় জলসীমায় সব ধরনের নৌ-চলাচলের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।

অভ্যন্তরীণ, সমুদ্র ও উপকূলীয় পানিসম্পদকে দূষণ, দখল ও ভরাটের কবল থেকে রক্ষায় বিদ্যমান প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী এবং বাংলাদেশি ক্যাডেট ও নাবিকদের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়- এমন কাজ থেকে বিরত রাখতে নৌ-পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নৌ-পরিবহন অধিদফতরের সকল কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।