ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পাকিস্তানকে ঘৃণা….

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
পাকিস্তানকে ঘৃণা….  তোফায়েল আহমেদ।

ঢাকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে পাকিস্তান হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা ভিডিও’র কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর কথাতেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তখন জিয়াউর রহমানকে কেউ চিনতোও না।    

ভিডিওটিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নন, জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক’-এমন অপপ্রচার চালানো হচ্ছিলো।
 
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সচিবালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং ঘৃণিত।

যারা এই কথা বলে তাদের ঘৃণা।

আপত্তিকর ভিডিও সরিয়ে নিলো পাকিস্তান হাইকমিশন

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান নামে একটা লোক আছে, আমি তোফায়েল আহমেদ জানতাম না। আমরা যখন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান করি, তখন জিয়াউর রহমান নামও ছিল না। বঙ্গবন্ধু যখন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখন জিয়াউর রহমান নামে কোনো মানুষ আছে বলে আমরা জানতাম না।
 
“জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে না থেকে যদি পাকিস্তানে থাকতেন, অথবা ঢাকায় থাকতেন, তিনি পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করতেন। কারণ তিনি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন না। তার বড় প্রমাণ, সংবিধানকে তিনি তছনছ করেছেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন। চারটি মূল নীতিকে তিনি তছনছ করেছেন। আমরা যারা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছি, সেখানে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি এনে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, সেটা তিনি চালু করেছেন। সুতরাং, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, ঘোষণার তো প্রশ্নই ওঠে না। ”
 
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১ মার্চ হোটেল পূর্বাণীতে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু মিটিং করছিলেন, ইয়াহিয়া খান যখন ঘোষণা দিল যে, অধিবেশন বসবে না, দাবানলের মতো আগুন জ্বলে উঠলো। লক্ষ লক্ষ লোক হোটেল পূর্বাণীকে ঘিরে রাখলো বঙ্গবন্ধুর কথা শোনার জন্য। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলছেন, আমি বিনা প্রতিবাদে কোনো কিছু যেতে দেব না। বিদেশি সাংবাদিকরাও ছিলেন। তিনি পল্টনে গেলেন না, আমাদেরকে পাঠিয়েছেন।
 
“আমরা বলেছি, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমার কথায় স্বাধীন হয়েছে? পতাকা পুড়িয়ে দিয়ে বলেছি আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন, স্বাধীন হয়েছে? যতক্ষণ মহান নেতা না বলেছেন, ততক্ষণ মানুষ স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন নাই। তিনি ৭ মার্চে নির্দেশ দিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। তার মানে স্বাধীনতা ঘোষণা না?”
 
সাংবাদিকদের অনুরোধ করে মন্ত্রী বলেন, আপনারা পাকিস্তানের ৮ মার্চের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র একটা প্রতিবেদন পাবেন…, সেখানে বলেছে- আমরা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে, বোমারু বিমান নিয়ে প্রস্তুত আছি। কিন্তু শেখ মুজিব এতো চতুর, এমন একটা বক্তৃতা দিলেন, একদিকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, আর একদিকে পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব নিলেন না। নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার ছিল না। ইয়াহিয়া খান এলেন ১৫ তারিখ। ১৬ তারিখ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন এখনকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে।

সেখানে কথা বলে ৩২-এ যেতেন বঙ্গবন্ধু, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতেন। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, সাংবাদিকরা ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসা করেছিল, আপনার জন্মদিনে অনুভূতি কী? তিনি বলেছিলেন, আমি আমার জন্মদিন পালন করি না। কেক কাটি না, কেন কাটবো? যে দেশের মানুষকে কথায় কথায় হত্যা করা হয়, গুলি করা হয়, তাদের নেতা হিসেবে আমার জন্মদিনই কি আর মৃত্যু দিনই কি। আমি তো আমার জীবন বাংলার জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি।      
 
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, লক্ষ্য করেন ইয়াহিয়া খানের ২৬ মার্চের ভাষণ- …দিস টাইম উইল নট গো আন-চ্যালেঞ্জ। আওয়ামী লীগকে আমার আগেই বাজেয়াপ্ত করা উচিত ছিল, এটা আমার ভুল হয়েছে।
 
“জিয়াউর রহমানের নাম নিয়েছে ইয়াহিয়া খান? স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছে?”, প্রশ্ন ছোঁড়েন বঙ্গবন্ধুর এ ঘনিষ্টজন।
 
তোফায়েল বলেন, যারা এই দেশে অজ্ঞ, যারা প্রতারণা করে তারা এই কথা বলে। পাকিস্তান তো একটা শত্রু রাষ্ট্র। বাংলাদেশ থেকে অনেক অনেক পিছিয়ে। একটা অকার্যকর রাষ্ট্র।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
এমআইএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।