জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়া গ্রেফতার পাইলট সাব্বিরের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে এ কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ বলেন, মিরপুরে র্যাবের অভিযানে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত আব্দুল্লাহর ভাড়া বাড়ির মালিকের ছেলে সাব্বির ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমিতে প্লেন চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত একটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের চাকরি করেন। ২০১৪ সাল থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে পাইলট হিসেবে কর্মরত। তিনি বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং-৭৩৭ পরিচালনা করছিলেন এবং সবশেষ সোমবার (৩০ অক্টোবর) রাতে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করেন।
মুফতি মাহমুদ বলেন, জঙ্গি আব্দুল্লাহর সঙ্গে সাব্বিরের ঘনিষ্ঠতা ছিল। নব্য জেএমবি নেতা সারোয়ার জাহানের মাধ্যমে তিনি জঙ্গিবাদের দীক্ষা নেন। গুলশান হামলার আগে ও পরে সারোয়ার জাহান, আব্দুল্লাহ ও সাব্বির বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাইলট সাব্বির প্লেন চালিয়ে সরকারের শীর্ষস্থানীয়দের বাসভবনে হামলার পরিকল্পনা করেন। এছাড়া যাত্রীদের জিম্মি করে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে নিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা ছিল তার। বিমানে চাকরির ভাতা হিসেবে ১০ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল তার। এরপর ওই টাকা আব্দুল্লাহর মাধ্যমে সংগঠনে দান করতে চেয়েছিলেন সাব্বির।
মুফতি মাহমুদ বলেন, যেহেতু আজ (মঙ্গলবার) ভোরেই অপারেশন শেষ হয়েছে, সেহেতু বেশি তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত সব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ও সাব্বিরের প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে আমরা এমন পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত হতে পেরেছি।
সাব্বিরকে গ্রেফতারে এমন একটি পরিকল্পনা নস্যাৎ করে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে বড় একটি বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা গেছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
গত ৪ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর দারুস সালামে জঙ্গি আব্দুল্লাহর আস্তানা কমল প্রভা বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযান চলাকালীন আত্মঘাতী বিস্ফোরণে জঙ্গি আব্দুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান এবং দুই সহযোগী নিহত হন।
মুফতি মাহমুদ বলেন, এ ঘটনার পর র্যাব গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে এবং দায়ের করা মামলায় কমল প্রভা বাড়ির মালিক হাবীবুল্লাহ বাহার আজাদসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ২৬ অক্টোবর নারায়নগঞ্জ থেকে আব্দুল্লার ঘনিষ্ঠ সহযোগী বিল্লাল হোসেনকে (২৩) গ্রেফতার করা হয়। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সোমবার দিনগত রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- কমলপ্রভা বাড়ির মালিকের স্ত্রী সুলতানা পারভীন (৫৫), ছেলে সাব্বির এনাম সাব্বির (৩১), সাব্বিরের মামাতো ভাই আসিফুর রহমান আসিফ (২৫) ও আব্দুল্লাহর সহযোগী মো. আলম (৩০)।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, সুলতানা পারভীন প্রায়ই জঙ্গি আব্দুল্লাহর সঙ্গে আলোচনা করতেন এবং সংগঠনের জন্য বিভিন্ন সময় আর্থিক সহায়তা করতেন।
আসিফ আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। বিভিন্ন বিস্ফোরক সরবরাহ করতেন। তার এক বন্ধুর কাছ থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল নিয়ে আব্দুল্লাহকে দিতে চেয়েছিলেন। গ্রেফতার আলমের দারুস সালাম এলাকায় একটি চায়ের দোকান রয়েছে।
গত রমজান মাসে আলমের মাধ্যমে একটি ট্রাক ভাড়া করে ইউরোপে হামলার মত নিকটস্থ কোনো পুলিশি স্থাপনায় গাড়ি হামলার পরিকল্পনা করে বিল্লাল।
***সরকারি উচ্চপদস্থদের বাসভবনে হামলার পরিকল্পনা ছিল
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
পিএম/এএ