মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সিপিএ সম্মেলনের সমাপনী দিনে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারকে অবিলম্বে ও নি:শর্তভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর যাবতীয় সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও সেনা মদদপুষ্ট দুর্বৃত্তরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর যে অব্যাহত নারকীয় নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে, বিবৃতিতে তারও তীব্র নিন্দা জানানো হয়। পাশাপাশি ভূমি ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।
এবিষয়ে সিপিএ সেক্রেটারি জেনারেলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, তিনি যেন বিষয়টি সিপিএভুক্ত দেশগুলোর সংসদ, জাতিসংঘের মহাসচিব, সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে অবহিত করেন এবং এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করেন। একই সঙ্গে পরবর্তী সিপিএ সাধারণ সম্মেলনে মিয়ানমারের এই ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের বিষয় থাকলে তা উত্থাপন করতে বলা হয়েছে।
এবিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, জাতিসংঘের সুপারিশ, সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা, ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)’র ১৩৭ তম সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের আলোকে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা হোক।
এদিকে মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) সিপিএ সম্মেলনের মধ্যাহ্ন বিরতির পর অধিবেশন শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সিপিএ কোনো রেজুলেশন বা স্টেটমেন্ট দেবে কীনা এ নিয়ে একটা ধূম্রজাল তৈরি হয়। মধ্যাহ্ন বিরতির সময় কয়েকজন সাংবাদিক বিআইসিসিতে সিপিএ’র চেয়ারপার্সন ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে তিনি বলেন, ‘সিপিএ’র বিধান হচ্ছে, কোনো ইস্যু এজেন্ডাভুক্ত করতে হলে সাধারণ এসেম্বলি’র কমপক্ষে ৬০ দিন আগে নোটিশ দিতে হয়। যেহেতু বর্তমান রোহিঙ্গা ইস্যুটি অনেক পরে সৃষ্ট হয়েছে, সে কারণে এটির এজেন্ডাভুক্ত হওয়ার সুযোগ ছিল না। আর সিপিএ তে জরুরি ভিত্তিতে কোনো ইস্যুকে এজেন্ডাভুক্ত করারও সুযোগ নেই। তাই কোনো রেজুলেশন বা বিবৃতি দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সম্মেলন শেষে আমার সমাপনী বক্তব্যে অন্যসব বিষয়ের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুটি থাকবে। ’
যদিও পরে ঠিকই এ প্রসঙ্গে বিবৃতিটি দেয়া হয়। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুর গুরুত্ব ও এর মানবিক দিককে মাথায় রেখেই তারা এ বিষয়ে বিবৃতিটি দিয়েছেন।
এর আগে বিবৃতি দেওয়া- না দেওয়া নিয়ে দিনভর চলে ধূম্রজাল। বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণও ব্যাখ্যা করেন স্পিকার নিজের সম্মেলনের সমাপনী বক্তৃতায়। বিবৃতির বিষয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিপিএ সম্মেলনে কোনো নির্ধারিত এজন্ডা না থাকলেও সদস্য দেশগুলোর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ব্রিফিং-এর আয়োজন করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের পদক্ষেপ ও সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তাতে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন জানান। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই এই বিবৃতি দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে এই সংকটের দ্রুত সমাধান হবে বলে সিপিএ আশা করছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সিপিএ সম্মেলনের এই বিবৃতি জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটিতে বাংলাদেশের দেওয়া রেজুলেশনের পক্ষে সিপিএভুক্ত দেশগুলো ভোট দিতে পারবে। সিপিএ বাংলাদেশের পক্ষে আছে।
বাংলাদেশ সময়:২১২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৭/আপডেট ২০১০ ঘণ্টা
এসএম/এসকে/জেএম