চাকরির গ্রেড অনুসারে ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট নাজমুলের ভাগ্যে জুটেছে। ছোট পরিসরের ওই ফ্ল্যাটই হয়েছে এখন তার গলার কাঁটা।
অফিস সহায়ক হিসেবে প্রতি মাসে নাজমুলের বেসিক বেতন ১০,০৫০ টাকা। যার ৬৫ শতাংশ ফ্ল্যাট ভাড়া বাবদ কেটে নিচ্ছে সরকার। সেই হিসেবে ৬ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া বাবদ পরিশোধ করতে হয় প্রতি মাসে। পাশাপাশি প্রতি মাসে দুই সিলিন্ডারের গ্যাস খরচ ২২শ’ টাকা, বিদ্যুৎ ৯০০ টাকা, সার্ভিস চার্জ ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতিমাসে ১০ হাজার ১০০ টাকা গুণতে হয় ভাড়া বাবদ। ফ্ল্যাট বরাদ্দের পর থেকেই ৬৫ শতাংশ বেসিক বেতনের পাশাপাশি অন্যান্য খরচ গুণতে হচ্ছে কর্মচারীদের।
ফ্ল্যাট ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে নাজমুল বলেন, আমার পরিবারের সদস্য মোট ছয় জন। ছেলে-মেয়ে উপযুক্ত বয়সের। তাদের জন্য আলাদা দুই রুম লাগে। বৃদ্ধ বাবা-মা আছে, তাদের কোথায় রাখবো? ছেলে-মেয়ে কোথায় থাকবে? আর স্ত্রী নিয়ে আমি কোথায় থাকবো? তাই চিন্তা ভেবেছি, সরকারি ফ্ল্যাট ছেড়ে বাইরে থাকবো। দুই রুমের কবুতরের খাঁচায় বসবাস করা আমার পক্ষে সম্ভব না। ১০ হাজার ১০০ টাকায় বাইরে ভালোবাসা পাবো।
শুধু নাজমুল নয় অনেকে ছেড়ে দিচ্ছেন রেডি ফ্ল্যাট। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটগুলোর রুম দেখতে অনেকটা কবুতরের খাঁচার মতো। যে কারণে অনেকেই ফ্ল্যাট ছেড়ে দিচ্ছেন। বাইরে থেকে দেখতে চাকচিক্যময় হলেও ভেতরের দৃশ্য করুণ। বাইরের সিঁড়ি ও ফ্লোরে টাইলস থাকলেও রুমের ভেতরে নেই।
বাথরুমের ভেতর পড়েছে কলাম। ফলে বাথরুম ব্যবহারে সমস্যা হয়। রান্নাঘরে ঝুলছে বড় বড় পাইপ। যেগুলো অনেকাংশে ছয় মাস না যেতেই নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ময়লা পানি পড়ছে রান্না ঘরে। এছাড়া ছয় মাস না যেতেই ফ্ল্যাটের ভেতরের প্লাস্টার উঠে যাচ্ছে। এখনও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে প্রতি পরিবারকে গ্যাস বাবদ ২২শ’ টাকা গুণতে হচ্ছে। পাশাপাশি সার্ভিস চার্জও রয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের সুবিধা বৃদ্ধির পরিবর্তে তাদের ঝামেলায় ফেলানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কর্মচারীরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দুই রুমের ছোট ফ্ল্যাট হওয়ার কারণে এখানে কেউ থাকতে চাচ্ছেন না। একক পরিবারই থাকছে, কিন্তু যৌথ পরিবারের সবারই অনীহা ওই সব ফ্ল্যাটে।
জুলাই ২০১১ থেকে চলমান প্রকল্পটি সমাপ্ত হয় জুন ২০১৭ সালে। সমাপ্ত এই প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় হয় ২০৯ কোটি টাকা। চলতি মাসের দুই নভেম্বর প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তদন্ত কমিটি। পরিদর্শনে নানা ধরনের অসঙ্গতি ফুটে উঠেছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গণপূর্ত অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বিষয়টি নিয়ে বারবার চেষ্টা করা হলেও গণপূর্ত অফিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি।
ফ্ল্যাটগুলো যখন নির্মিত হয় তখন গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন শাহিন আহমেদ। ছোট পরিসরের ফ্ল্যাট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সব দিক বিবেচনা করেই ফ্ল্যাটগুলো নির্মিত হয়েছে। আমাদের একার সিদ্ধান্তে হয়নি।
ফ্ল্যাটগুলো নিতে কর্মচারীরা অনীহা প্রকাশ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফ্ল্যাটগুলো কেন ফাঁকা আছে কেনই বা কর্মচারীরা নিতে চাচ্ছেন না তা আমি বলতে পারবো না। ফ্ল্যাটগুলো স্পিকার (ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী) বরাদ্দ দিচ্ছেন, আপনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন।
পরিদর্শনে দেখা গেছে মোট আটটি ভবনে ৪৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। তিনটি ভবনে ৬০০ বর্গফুটের ১৬৮টি, দুটি ভবনে ৮০০ বর্গফুটের ১১২টি, দুটি ভবনে এক হাজার বর্গফুটের ১১২টি এবং একটি ভবনে এক হাজার ৫০ বর্গফুটের ৫৬টি ফ্ল্যাট নির্মিত হয়েছে।
এর মধ্যে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা রয়েছে। তবে ৬০০ বর্গফুটের ১৬৮টি ফ্ল্যাট যেন গলার কাঁটা। এগুলোর বরাদ্দ নিতে চাচ্ছেন না কর্মচারীরা।
আইএমইডি’র পরিদর্শনে আরও দেখা গেছে, ১৬৮টি ফ্ল্যাটের মধ্যে এখনও ৬০টি ফ্ল্যাট ফাঁকা। এগুলো নিতে অনীহা কর্মচারীদের। ফলে ফ্ল্যাটগুলো বরাদ্দহীন পড়ে আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৭
এমআইএস/এমজেএফ